করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো। এর মধ্যে পরিষ্কার না করায় হলগুলোর গণরুম, রিডিং রুম ও ডাইনিং-ক্যানটিনে জমেছে ধুলা-ময়লার স্তূপ।
গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবির প্রায় সব আবাসিক হলেরই একই দশা। সরেজমিনে জনশূন্য হলগুলোয় কর্মচারীদের খোশগল্প করতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে সূর্যসেন হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের বৃহত্তম গণরুম হিসেবে পরিচিত ‘লাদেন গুহা’র প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে একেবারে ভেতর পর্যন্ত ধুলা-ময়লায় ঠাসা। গণরুমের কক্ষগুলোয় এক বছরের বেশি সময় আগে শিক্ষার্থীদের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র এদিক-সেদিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে৷ এসব জিনিসপত্রের মধ্যে আছে জামাকাপড়, স্যুটকেস, ট্রাংক ইত্যাদি৷ দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় সেগুলোর ওপর ধুলা-ময়লার আস্তরণ জমেছে৷ সব মিলিয়ে তিন কক্ষবিশিষ্ট ওই গণরুমের পরিবেশ গুমোট হয়ে আছে৷ ইঁদুর, তেলাপোকাসহ নানা পোকামাকড় সেখানে আবাস গড়েছে।
এ বিষয়ে হল প্রশাসন বলছে, হলে গণরুম বলে আর কিছু থাকবে না৷ তাই এগুলো পরিষ্কার করা এখন জরুরি নয়।
সূর্যসেন হলের ১৫৭ নম্বর কক্ষের দরজাটি আধা ভাঙা অবস্থায় দেখা গেল৷ নিচতলাসহ হলের বিভিন্ন স্থানের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে৷ হলটির অতিথিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, সোফাগুলোর ফোম খুলে বাইরে কয়েকটি চেয়ারের ওপর রাখা হয়েছে৷ অধ্যয়নকক্ষ ও টিভিকক্ষের চেয়ার-টেবিলগুলোয় পড়েছে ধুলা-ময়লার পুরু আস্তরণ৷ হলের এক কোণে স্তূপ করে রাখা হয়েছে একগুচ্ছ ভাঙা ডালপালা ও ঘাস-গুল্ম।
হল প্রাঙ্গণের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত লেকটিতেও পরিচর্যার অভাবে শেওলা জমে গেছে। হল খোলা থাকা অবস্থায় এই লেকে কিছু মাছও ছিল৷ এখন সেখানে শুধুই শেওলাজমা স্থবির নষ্ট পানি। হলের ক্যানটিন-ডাইনিং ও দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আগে হলে যেসব কুকুর ও বিড়াল থাকত, সেগুলোকেও কোথাও দেখা গেল না৷ সুনসান নীরব হল প্রাঙ্গণে পাখির কিচিরমিচির আর কর্মচারীদের হাস্যময় খোশগল্প ছাড়া আর কিছুই দেখা বা শোনা গেল না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু সূর্যসেন হল নয়, অন্য হলগুলোর অবস্থাও কমবেশি একই৷ অন্যান্য হলেও গণরুমগুলোয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে এক বছরের বেশি সময় আগে শিক্ষার্থীদের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র৷ বেশির ভাগ হলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই।
সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবদুল মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, গণরুমের শিক্ষার্থীদের একটা তালিকা করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় কিছু কক্ষ ও সিট খালি হয়েছে। যখনই হল খুলবে, খালি হওয়া কক্ষের সিটগুলো গণরুমের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দিয়ে তাৎক্ষণিক তাঁদের সেগুলোয় তুলে দেওয়া হবে। সবাই সহযোগিতা করলে এটির বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে৷ করোনাকালে নিজের নিরাপত্তার জন্যই সবার সহযোগিতা করা উচিত।
আবদুল মোতালেব জানান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের প্রস্তুতি হিসেবে সূর্যসেন হলের ফটকের সামনে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসানো হয়েছে৷ এখন বেলা তিনটার মধ্যে যেসব ছাত্র হলে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে হলের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী গিয়ে কক্ষও পরিষ্কার করে দিয়ে আসছেন৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ হলের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক আগের হল হওয়ায় টুকটাক এগুলো হচ্ছে৷ শিগগিরই হলে প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply