ঝালকাঠি ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা ও আইসিইউ না থাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে গুরুতর রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। এতে রোগী ও স্বজনদের অতিরিক্ত টাকা খরচের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালুর জন্য ছয় মাস আগে প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হলেও কোনো বরাদ্দ বা যন্ত্রাংশ আসেনি। এ ছাড়া গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ শুরু হলেও এখনো তা শেষ হয়নি। এসব কারণে এখানে এসে করোনা রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।
ঝালকাঠি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি মেটাতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঝালকাঠি সদর হাসপাতালসহ সারা দেশের ২৩টি হাসপাতালে একযোগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের শুরু করে স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার অক্সিজেন ট্যাংক। কিন্তু এখন ধীরগতিতে চলছে পাইপ স্থাপনের কাজ। শেষ পর্যায়ে এসে সামান্য কিছু কাজের অভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের ঝুঁকি না নিয়ে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু হলে মুমূর্ষু রোগীদের এখানেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। আইসিইউ চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে আইসিইউ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেখানে ১০ শয্যার আইসিইউ ও ৫ শয্যার এইচডিইউ থাকবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রাংশের ব্যবস্থা করা হবে।
আজ শুক্রবার সকালে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডে ৯ দিন ধরে ভর্তি আছেন শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার গৃহিণী সুলতানা রাজিয়া (৪৭)। তিনি করোনা ছাড়াও ক্যানসার, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রতি মাসে তাঁকে কেমোথেরাপি দিতে হয়। গত ৯ দিনের মধ্যে ৫ দিনই তাঁর শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। স্বজনদের দাবি, তাঁকে কিছু দিন আইসিইউতে রাখা খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আইসিইউ না থাকায় তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
সদর উপজেলার চর ভাটারকান্দা এলাকার শমসের আলী (৬০) গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে করোনা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। কিন্তু অক্সিজেনের মাত্রা ৭০–এ নেমে আসায় তাঁকে আজ সকালে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও আইসিইউ সুবিধা থাকলে আমাদের মতো গরিব রোগীদের বরিশাল যেতে হতো না।’
সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু হলে প্রত্যেক রোগীকে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে অক্সিজেন সিলিন্ডারে দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ লিটার সরবরাহ করা সম্ভব। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কার্যাদেশে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের গতি বাড়াচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রকৌশলী সজল মেহেদী বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগির অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ওই কাজ শেষ হলে আইসোলেশনসহ সব ওয়ার্ডের রোগীদের প্রয়োজনে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে।
ঝালকাঠি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শৈলেন মন্ডল বলেন, মাটির নিচে পাইপ স্থাপন ও কিছু কারিগরি কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই প্রতিটি ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জাফর আলী দেওয়ান বলেন, ‘একজন সুস্থ মানুষের অক্সিজেনের মাত্রা থাকে ৯৬। তাই কোনো করোনা রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা ৮৫–এর নিচে নামলেই তাঁকে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কারণ, সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে তাঁদের শ্বাসকষ্ট দূর করা সম্ভব নয়।
১০৩ জনের করোনা শনাক্ত
ঝালকাঠি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৫ জন, রাজাপুরের ৩৪ জন ও নলছিটির ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় কিট–সংকটের কারণে পরীক্ষাও হচ্ছে কম। আবার অনেকে উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা না করিয়ে বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনায় রাজাপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ (৭০) মারা গেছেন। আজ সকালে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী নূর মোহাম্মদের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৮ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত জেলায় ৩৬ জন মারা গেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মো:মেৱাজ আলী
Leave a Reply