একজনের আর্জেন্টিনার হয়ে ৭৫ গোল, যা দেশটির সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ব্রাজিলের হয়ে অন্যজনের গোল ৬৮টি, কিংবদন্তি পেলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে লিওনেল মেসি বা নেইমার—সময়ের সেরা দুই লাতিন ফুটবলার দেশের জার্সিতে নকআউট পর্বে নামলেই যেন গোল করতে ‘ভুলে বসেন’। নেইমার ব্রাজিলের হয়ে বড় টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে এখন পর্যন্ত করেছেন মাত্র ২ গোল, অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে নকআউটে মেসির গোল মাত্র ৪টি!
কেন এমন হয়, এর সহজ ব্যাখ্যা অবশ্য নেই। নেইমারের ক্ষেত্রেই যেমন, কখনো আছে চোটের ব্যাপার, কখনো নিষেধাজ্ঞা, আবার কখনো দলেই সুযোগ না পাওয়া। ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেই লালকার্ড দেখেছিলেন তিনি। এরপর পেয়েছিলেন চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। পরের বছর কোপার দলেই ছিলেন না তিনি। ব্রাজিল সেবার পেরুতে পারেনি গ্রুপ পর্বই। সবশেষ ২০১৯ সালের কোপায় নেইমার ছিলেন না চোটের কারণে। সেবার অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল।
বিশ্বকাপেও নেইমারের আছে চোটের ইতিহাস। ২০১৪ সালে দেশের মাটির বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে চোট পেয়ে ছিটকে যান তিনি, সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে ভরাডুবি হয় ব্রাজিলের।
নকআউট পর্বে মেসির গোল ২টি।সব মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড খেলেছেন ৭টি নকআউট ম্যাচ। নকআউটে তাঁর প্রথম গোলটি ২০১৩ সালে, কনফেডারেশনস কাপের সেই ফাইনালে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। ২০১৮ সালে এসেছিল দ্বিতীয় নকআউট পর্বের গোলটি, মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে। তবে সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল, নেইমার ছিলেন গোলশূন্য।
মেসির ক্ষেত্রে অবশ্য নেইমারের মতো এমন ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট ‘মিস করার প্রবণতা’ নেই এখন পর্যন্ত। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ২০টি নকআউট ম্যাচ খেলেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। তবে তাঁর এমন ম্যাচে গোল করার হার কম নেইমারের মতোই, গত প্রায় ১৪ বছরে যে সংখ্যাটা মাত্র ২।
নকআউট পর্বে সব মিলিয়ে করা ৪ গোলের প্রথমটি মেসি করেছিলেন ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে, পেরুর বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে। পরের রাউন্ডে মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে, মেসি গোল করেছিলেন আরেকটি। এর পরের দুই নকআউট পর্বের গোল এসেছিল ২০১৬ সালে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জাল খুঁজে পেয়েছিলেন একবার, আর সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে করেছিলেন আরেকটি। ৪-০ গোলের জয়ে ফাইনালে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা, তবে ফাইনালে হেরেছিল তারা চিলির কাছে, মেসিও ছিলেন গোলশূন্য।
মেসির ক্ষেত্রে অবশ্য ঘুরে ফিরে বড় করে আসে বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্স। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি, তবে শেষ ষোলো থেকে পরের পর্বগুলোতে গোল করেননি একটিও।
দুজনের নকআউট পর্বের এমন পরিসংখ্যান তাই সামনে আনে, তাহলে কি চাপটা ঠিকঠাক সামাল দিতে পারেন না তারা? ব্যাপারটা অবশ্য এভাবে বলার সুযোগ নেই। ক্লাবভিত্তিক ফুটবলে এমন চাপের মুহূর্তে নিয়মিতই গোল করেছেন তাঁরা, সেটি এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও।
আপাতত নিজেদের নকআউট পর্বের এই রেকর্ড একটু ভালো করার সুযোগ মেসি ও নেইমার পাচ্ছেন শিগগিরই। শনিবার সকালে চিলির বিপক্ষে এবারের কোপার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে নেইমারের ব্রাজিল। মেসির আর্জেন্টিনা নামবে তার পরদিন, ইকুয়েডেরের বিপক্ষে।
মেসি ও নেইমার কি পারবেন নকআউটে গোলের সংখ্যাটা বাড়াতে?
Leave a Reply