দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম
ব্যবসায়ী আলম প্রামাণিক জরুরি কাজে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মাগুরা গিয়েছিলেন। সেখানে কাজ শেষে আজ সোমবার সকালে তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় ফিরছিলেন। তাঁর মোটরসাইকেলের সামনে সাদা কাগজে লেখা ‘জরুরি, ডাক্তার’। আজ সোমবার সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আলম প্রামাণিকের সঙ্গে দেখা হয়।
আলম প্রামাণিক বলেন, ‘পথে ঝামেলা এড়াতেই এই পথ বেছে নিয়েছি। আসার পথে কোনো ঝামেলা হয়নি। সরাসরি ফেরিঘাটে এসে পৌঁছেছি। অসুবিধা নেই, আমি তো একজন ওষুধ বিক্রেতা।’
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায়, সকাল ৯টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা মাঝারি আকারের কে-টাইপ ফেরি ‘ঢাকা’ এসে পৌঁছায়। তাতে ৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি কাভার্ড ভ্যান, একটি ট্রাক ও কয়েকটি মোটরসাইকেল। আরও রয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ যাত্রী। ফেরিটি ঘাটে ভেড়ামাত্র যাত্রীরা হুড়মুড় করে নেমে পড়েন। নদী পাড়ি দিতে অপেক্ষমাণ দুটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি ট্রাক এবং তিন-চারটি ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী ওঠেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফেরিটি আবার পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়।সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী। এসব যাত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশা-মাহেন্দ্র করে, কেউবা ট্রাকে চেপে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছেন। তাঁদের সবার একই ভাষ্য, জরুরি কাজ আছে বলেই তাঁরা বাড়ির বাইরে এসেছেন। যত কষ্টই হোক গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তাঁরা।
ফেরি থেকে নেমে ব্যক্তিগত গাড়িতে যশোর যাচ্ছিলেন গাজীপুরের ব্যবসায়ী জুয়েল শেখ। তিনি বলেন, ‘যশোর যেতে হবে জরুরি কাজে। আজ খুব সকালেই রওনা হয়েছি। পথে কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। যদি পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকায়, তাহলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব। দেশের এই পরিস্থিতিতে কেউ তো আর এমনি এমনি বাড়ির বাইরে বের হয় না।’
আবার কেউ কেউ কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন। বাড়ি বসে থেকে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কুষ্টিয়া থেকে আসা আমজাদ সরকার বলেন, ‘এখন কোথাও তেমন কোনো কাজ নেই। সংসার তো আর চলছে না। কী আর করতাম। তাই কাজের জন্য ঢাকার দিকে যাচ্ছি। ঢাকায় যেতে পারলে কিছু একটা করতে পারবই।’ আমজাদসহ তিনজন রাজবাড়ী পর্যন্ত একটি অটোরিকশা রিজার্ভ করে এসেছেন। রাজবাড়ী থেকে ভেতর দিয়ে আরেকটি অটোরিকশায় করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসেছেন। পথে কোনো ঝামেলা হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, যানবাহনের চাপ কম থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রোস্টার করে প্রতিদিন চারটি রো রো (বড়), তিনটি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি চলাচল করছে। বর্তমানে ঘাটে কিছু পণ্যবাহী এবং ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। খুচরা যাত্রীর সংখ্যা কম রয়েছে। তবে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রী বেশি দেখা যাচ্ছে।
Leave a Reply