দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম
৪ মাস ২৫ দিন বন্ধ ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। এই সময়ে হয়েছে কিছু সংস্কারকাজ। ৩৫০টির মতো প্রাণীর জন্ম হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের কারণে ৪ মাস ২৫ দিন বন্ধ ছিল রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ এই বন্ধের পর আজ শুক্রবার খুলে দেওয়া হয়েছে চিড়িয়াখানা। আর খোলার প্রথম দিনেই মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এখানে নেমেছিল দর্শনার্থীর ঢল।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, আজ সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে এখানে।
আজ সারা দিনই রাজধানীর আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও নেমেছে। সাপ্তাহিক ছুটির এই দিনে মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় যান। তবে বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে।
অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৩টি স্থানে সাবান ও পানির ট্যাংক রাখা হয়েছে। তবে দুটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, পানি থাকলেও সাবান নেই।
তবে করোনা ঝুঁকির মধ্যেও থেমে নেই মানুষের আনন্দ। শাপলা নামের এক দর্শনার্থীকে বাঘের খাঁচার সামনে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেল। বাঘের দুটি বাচ্চা দেখে তাঁর এই উচ্ছ্বাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যশোর থেকে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসছি। পরীক্ষা শেষে চিড়িয়াখানায় চলে এলাম।’
ইবনে শাহরিয়ার সামিন এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে। সামিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চা অনেক দিন বাসায়। চাচ্ছিলাম খোলামেলা একটা জায়গায় যেতে। এ স্থানটা একটু ফাঁকা পাওয়া যায়, তাই এলাম।’
মাস্ক ছাড়া ঘুরছিলেন দুজন। জানতে চাইলে তাঁদের একজন রুহুল আমিন বলেন, অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি। গরমে আর পারছি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
দীর্ঘ বন্ধের মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ৩৫০টির মতো প্রাণী জন্ম নিয়েছে বলে জানিয়েছেন, জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক আবদুল লতিফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাখির মধ্যে ময়ূর ১৩০টির বেশি, ইমু ২৩টি, বক ৮০টির বেশি (কানি, নিশি, পানকৌড়ি ও ফ্লেমিঙ্গ বক) বাচ্চা দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু বক প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া চিত্রা হরিণ জন্ম নিয়েছে ৭০টির বেশি। একটি বাঘিনী জন্ম দিয়েছে দুটি শাবক, অবন্তিকা ও দুর্জয়। বাচ্চাগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে মূল তারের বেড়া থেকে কিছুটা দূরে সুউচ্চ আরেকটি তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জলহস্তীর একটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। শ্রাবণ মাসে জন্ম হওয়ায় বাচ্চাটির নাম দেওয়া হয়েছে শ্রাবন্তিকা। দক্ষিণ আফ্রিকান ইম্পালা দুটি, গাধা তিনটি, জেব্রা দুটি, কমন ইলেন একটি বাচ্চা ও আফ্রিকান হর্সের তিনটি বাচ্চারও জন্ম হয়েছে বন্ধের এই সময়।
পরিচালক আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, বিধিনিষেধের সময় নিরিবিলি পরিবেশ ছিল, উত্ত্যক্ত করার কেউ ছিল না। এর ওপর পরিচর্যা বেশি পাওয়ায় প্রাণীগুলোর প্রজননক্ষমতা বেশি ছিল। এ ছাড়া ভালো পরিমিত খাবার ও নিরিবিলি পরিবেশ প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাণীর সংখ্যা বাড়ায় এখন জাতীয় চিড়িয়াখানায় স্থান সংকুলান কঠিন হয়ে পড়েছে। গাধা ও জলহস্তী রাখার সক্ষমতা আছে আটটি করে। কিন্তু এখন জলহস্তীর সংখ্যা ১৪টি, গাধার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫টি। এ ছাড়া সংখ্যা বাড়ায় বন্ধের মধ্যে ৫১টি চিত্রা হরিণ বিক্রি করা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকায়। আর ময়ূর বিক্রি হয়েছে ১১টি, ৩ লাখ টাকায়। দেশ ও বিদেশের চিড়িয়াখানার অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে বিনিময়ের চেষ্টাও চলছে।
বিধিনিষেধের কারণে চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংখ্যা বাড়লেও সঙ্গীর অভাব পূরণ হয়নি একটি গন্ডার ও একটি আফ্রিকান সিংহের। এ ছাড়া আগেই টেন্ডার হয়েছিল কিছু রেড ক্যাঙারু, শিম্পাঞ্জি, গ্রেটার কুদু, লামা ও চশমা বানরের। কেনার জন্য যোগাযোগ করা হলেও বিধিনিষেধের সময় পরিবহন সমস্যার কারণে টেন্ডার বাতিল হয়ে যায়। যদিও দ্রুত সেগুলো আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ বন্ধের সময় চিড়িয়াখানায় কিছু সংস্কারকাজও হয়েছে। এর মধ্যে চিড়িয়াখানার ভেতর সীমানা ধরে মূল গোলাকার সড়কের (রিং রোড) সঙ্গে প্রাণীর খাঁচার নতুন সংযোগ সড়ক তৈরি, নতুন আটটি যাত্রীছাউনি নির্মাণ অন্যতম।
Leave a Reply