সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহানা পারভীন ভালো আছেন। করোনায় দীর্ঘ ছুটির পর স্কুল খুলেছে। নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন, ক্লাস নিচ্ছেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে জিয়াউল হাসান একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। আরেক ছেলে রাকিবুল হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাকে সুস্থ দেখে দুই ছেলের মুখেই তৃপ্তির হাসি। আর ছেলেদের নিয়ে গর্বিত মা রেহানা পারভীনও।
ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকায় বসবাস করেন রেহানা ও তাঁর দুই ছেলে।
এ বছরের ১৭ এপ্রিল জিয়াউল হাসান এক অসাধ্যসাধন করেছিলেন। করোনায় আক্রান্ত মা রেহানা যখন তীব্র শ্বাসকষ্টে বাড়িতে বসে ছটফট করছিলেন, তখন জিয়াউল মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজে নামেন। কিন্তু পাচ্ছিলেন না। দিশেহারা জিয়াউল তবু হাল ছাড়েননি। তাঁর হঠাৎ চোখ পড়ে বাড়ির বারান্দায় রাখা নিজের মোটরসাইকেলটির দিকে। ছোট ভাই রাকিবুলকে বলেন দ্রুত মাকে তাঁর পেছনে বসিয়ে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে দিতে। এভাবে ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মা রেহানা পারভীনকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে।
পথচারীদের কেউ দৃশ্যটি মুঠোফোনে ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। দ্রুতই সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে। দৃশ্যটি নাড়া দেয় মানুষ মনে। সাত দিন চিকিৎসার পর মাকে সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর জিয়াউল নিজেও আক্রান্ত হন করোনায়।
কেমন আছেন সেই মা ও তাঁর ছেলে জিয়াউল? সম্প্রতি নলছিটির সূর্যপাশার বাড়িতে গিয়ে কুশল জানতে চাইলে নলছিটি বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহানা পারভীন গৌরবের হাসি হেসে বলেন, ‘অনেক ভালো আছি। আমার অসুস্থতার সময় ছেলেরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তা আমার কাছে বেঁচে ফেরার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল।’
রেহানা পারভীন বলছিলেন, ‘ওরা (ছেলে) যেটা করেছে, সেটা স্বাভাবিক। সব সন্তানেরই মা-বাবার প্রতি এমন হওয়া উচিত।’
রেহানা পারভীন শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ওদের বাবা নেই। আমিই ওদের মা-বাবা। এ জন্য অবসরে গিয়ে ওদের সংসার গুছিয়ে দিতে চাই।’
রেহানা পারভীনের একতলা পাকা বাড়ি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে ছিলেন ছেলে কৃষি ব্যাংকের লেবুখালী শাখার ব্যবস্থাপক জিয়াউলও। মাকে সুস্থ করে বাড়ি আনার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জিয়াউল বলেন, ‘এককথায় যদি বলি, তাহলে এটা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয়।’
জিয়াউল বলেন, ‘মায়ের জন্য আমরা যা করেছি, সেটা খুব বেশি কিছু নয়। কারণ, মা-বাবার ঋণ কোনো কিছুর বিনিময়ে শোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের মা সত্যি আমাদের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। মাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply