‘যখন এগিয়ে চলা কঠিন হয়, তখন কঠিনেরা এগিয়ে যায়। এটাই অস্ট্রেলিয়ান উপায়।’
দুবাইয়ে কাল যা হলো, তাতে কেভিন পিটারসেনের কথা না মেনে উপায় নেই। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে-পরে যে দলকে কেউই গোনায় ধরছিল না, সেই অস্ট্রেলিয়া কাল ফেবারিট পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে। সেটাও কী অবিশ্বাস্যভাবে! ৫ ওভারে ৬২ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। এক ওভার হাতে রেখেই কাজটা সেরে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার এ জয়ে সবাই ম্যাথু ওয়েডের বন্দনায় মেতেছেন। বহুদিন ধরে ফর্মে না থাকা ওয়েড গতকাল বৃহস্পতিবার ১৭ বলে খেলেছেন ৪১ রানের ইনিংস। ভয়ংকর ছন্দে থাকা শাহিন শাহ আফ্রিদিকে মেরেছেন টানা তিন ছক্কা। এর আগেই ওয়েডের ক্যাচ ফেলেছেন হাসান আলী। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত বলা হচ্ছে একে। যদিও ম্যাথু ওয়েডের ধারণা, তিনি আউট হলেও কিছু হতো না। এ ম্যাচ ঠিকই জিতত অস্ট্রেলিয়া।
গতকাল ১০ বলে ২০ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। এ সময় ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন ওয়েড। সহজ ক্যাচটা ফেলে দেন হাসান আলী। এরপরই যেন ম্যাচটা অন্য রকম হয়ে গেল। এতক্ষণ যাঁর বলে ব্যাট ছোঁয়ানো কঠিন মনে হচ্ছিল, সেই আফ্রিদিকে অবলীলায় টানা তিন ছক্কা মেরেছেন ওয়েড। প্রায় ইয়র্কার লেংথের দুটি বলক স্কুপ করে আছড়ে ফেলেছেন সীমানার ওপারে।
ম্যাচ শেষে হাসান আলীর দেওয়া ‘উপহার’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ওয়েডকে। অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের কাছে এ ঘটনা অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না, ‘এটা বলা কঠিন। ওই ক্যাচ ফেলা…আমি নিশ্চিত নই। আমাদের সম্ভবত ১২ দরকার ছিল, হয়তো ওই সময় ১৪ দরকার (২০ রান) ছিল। আমার মনে হয়েছে, ওই সময় ম্যাচ এমনিতেই আমাদের দিকে চলে এসেছিল। আমি যদি আউট হতাম এবং হ্যাঁ, অবশ্যই আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না, কী হতো। কিন্তু মার্কাস (স্টয়নিস) উইকেটে ছিল এবং প্যাট (কামিন্স) নামত বলে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে ম্যাচ যেকোনোভাবেই শেষ করে আসতাম।’
ওদিকে ম্যাচের শেষে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম কিন্তু মোটেও অধিনায়কসুলভ কাজ করেননি। ম্যাচ হারার পর সরাসরি হাসান আলীর ক্যাচ ফেলাকেই দায়ী করেছেন। ওয়েড কিন্তু তা মানতে রাজি নন, ‘আমি বলব না, এ কারণেই আমরা ম্যাচটা জিতেছি।’
সাংবাদিকেরা তবু সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। বারবার সেই ক্যাচ হাতছাড়ার প্রসঙ্গই তুলে আনছিলেন। কিন্তু ওয়েডের সোজাসাপ্টা জবাব, ম্যাচে এর আগেই নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ‘ক্যাচ যখন পড়েছে, এর আগেই আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে এই রান নেওয়া সম্ভব। যদি তিন বা চার ওভার আগে হতো, তাহলে ম্যাচের ফলে একটু প্রভাব ফেলত হয়তো।’
ওয়েডের চোখে ম্যাচের গতি আসলে পালটে দিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস। ৩১ বলে কাল ৪০ রান করা স্টয়নিস আড়ালে চলে গেছেন। কিন্তু চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে পথে রেখেছিল স্টয়নিসের ইতিবাচক ব্যাটিং। ওয়েডও সতীর্থের কথাই বলেছেন বারবার, ‘আমার ধারণা, ম্যাচ বদলে দিয়েছে হারিস রউফের (১৭ তম) ওভারে মার্কাসের ব্যাটিং। আমার ধারণা, ওই ওভারই ম্যাচটা আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে।’
কাল মাঠে দুই দল খেললেও গ্যালারিতে শুধু একটি দলই ছিল। পাকিস্তানি সমর্থকদের কাছে নতজানু হয়েছিলেন গুটিকয়েক অস্ট্রেলীয় সমর্থক। এমন দর্শকের সামনে খেলার চাপটা কীভাবে সামলেছে অস্ট্রেলিয়া, সেটা জানিয়েছেন ওয়েড, ‘ড্রেসিংরুমে কখনো আতঙ্ক জাগেনি। আমাদের একদম শেষ পর্যন্ত সবাই অভিজ্ঞ। বল হাতেও তাই। যখন ওভারে ১২ বা ১৩ রান করে নিচ্ছিল, তখনো আতঙ্কিত হইনি। এমন দর্শকের সামনে মনে হচ্ছিল পুরো ম্যাচেই পিছিয়ে ছিলাম আমরা। কিন্তু বল দেখুন, সাত, আট, নয়—এমন হচ্ছিল। আমাদের পিটিয়ে মাঠছাড়া করছিল, এমন নয়।’
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply