এবারের আফ্রিকান কাপ অব নেশনস (আফকন) জিতবে কোন দল? স্বাগতিক ক্যামেরুন থেকে মোহাম্মদ সালাহর মিসর, সাদিও মানের সেনেগাল, নাবি কেইতার গিনি, মরক্কো, ঘানা-আলোচনায় অনেক দলই আছে। কিন্তু ফেবারিটরা তেমন প্রত্যাশিত খেলা উপহার দিতে পারছে কোথায়? এক ক্যামেরুনই যা ভালো ফুটবল উপহার দিচ্ছে দর্শকদের, বাকি দলগুলো যেন গোল করতেই ভুলে গেছে।
সেনেগালের কথাই ধরা যাক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাদিও মানেদের জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিট পর্যন্ত। তা–ও জয়টা এসেছে একটা পেনাল্টির কল্যাণে, সে ম্যাচে জিম্বাবুয়ের রক্ষণাত্মক কেলভিন মাদজঙ্গে নিজেদের বক্সে বলে হাত না লাগালে পেনাল্টিও পাওয়া হয় না সেনেগালের।
গত রাতে গিনির বিপক্ষে জেতার জন্য পেনাল্টির ‘সাহায্য’-ও পায়নি সেনেগাল। গোলশূন্য ড্র করেছে দুই লিভারপুল সতীর্থ সাদিও মানে আর নাবি কেইতার সেনেগাল ও গিনি। তবে ব্যক্তিগত লড়াইয়ে কেইতা ছাড়িয়ে গেছেন মানেকে। সেনেগাল অধিকনায়ককে পেছনে ফেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন গিনি অধিনায়ক। ম্যাচের একপর্যায়ে মানেকে ফাউল করে হলুদ কার্ডও দেখেন কেইতা।
এমনিতেই দলে করোনার প্রকোপ, সঙ্গে চোটের যন্ত্রণা তো আছেই। যে কারণে খেলতে পারছেন না চেলসির গোলকিপার এদুয়ার্দ মেন্দি থেকে শুরু করে নাপোলির সেন্টারব্যাক কালিদু কুলিবালি ও ওয়াটফোর্ডের উইঙ্গার ইসমাইলা সার। দলের শক্তি এতে স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে, আর সেটাই বোঝা গেছে গিনির বিপক্ষে সেনেগালের প্রথমার্ধের খেলায়। গিনির নিয়ন্ত্রণেই ছিল প্রথমার্ধ। এমনকি ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিভাগের দল প্যারিস এফসির মিডফিল্ডার মরগান গিলাভোগির কল্যাণে আরেকটু হলে এগিয়েই যেত গিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের আরেকটু গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণ শুরু করে সেনেগাল। পিএসজির সেন্টারব্যাক আবদু দিয়ালো আর বায়ার্নের রাইটব্যাক বুনা সারের কল্যাণে গোল করার দুটি সোনালি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সেনেগাল। শেষমেশ সাদিও মানের নিষ্প্রভ থাকার দিনে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সেনেগালকে।
ওদিকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচের মতো দলের সবচেয়ে বড় তারকা পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংকে ছাড়া খেলতে নামা গ্যাবন শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র করে ঘানার সঙ্গে, ১-১ গোলে। ১৮ মিনিটে আর্সেনালের মিডফিল্ডার টমাস পার্টির সহায়তায় অধিনায়ক আন্দ্রে আইয়ুর গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। গোলটা শোধ করতে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় গ্যাবনকে। উইঙ্গার জিমি আলেভিনার গোলে সমতায় ফেরে দলটি। কিন্তু এই গোলটা নিয়েই একচোট মারামারি হয়ে যায় দুই দলের মধ্যে!
গ্যাবনের গোল করার ব্যাপারটা হজম করতে পারেনি ঘানা। আর পারবেই–বা কী করে? প্রথম ম্যাচে মরক্কোর কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়া দলটা কাল জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে যেত। ৩ পয়েন্টের জায়গায় ১ পয়েন্ট পাওয়ার কারণে ঘানার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাই এখন সংশয়ে। গ্যাবনের গোলের পর দুই পক্ষের খেলোয়াড়ই মেজাজ হারিয়েছেন, যার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ম্যাচ শেষে।
ঘানার স্ট্রাইকার বেঞ্জামিন তেতে গ্যাবনের উইঙ্গার এমিল বউপেনজাকে ঘুষি মেরে দৌড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান, যা নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাতাহাতি শুরু করেন। পরে ম্যাচ রেফারি আলজেরিয়ার লাভলু বেনব্রাহাম ঘানার টমাস পার্টি আর আন্দ্রে আইয়ুকে বলেন, তেতেকে ড্রেসিংরুম থেকে নিয়ে আসার জন্য, যেন তেতেকে লাল কার্ড দেখানো যায়। কিন্তু তেতের টিকিটিরও দেখা পাওয়া যায়নি। পরে তেতেকে সে অবস্থাতেই লাল কার্ড দেখান রেফারি। কমোরোসের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ আগামী ম্যাচে এই স্ট্রাইকারকে পাবে না ঘানা।
ওদিকে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কমোরোসকে ২-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করেছে মরক্কো। গোল করেছেন বেলজিয়ান ক্লাব স্ট্যান্ডার্ড লিয়েগের সেলিম আমাল্লা ও ডাচ ক্লাব এজেডের জাকারিয়া আবুখলাল। জিম্বাবুয়েকে ২-১ গোলে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে মালাউই।
Leave a Reply