ডলারের সংকট কাটাতে এবার প্রবাসী আয় সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকে কত দামে রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো প্রতিদিন বাজার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করবে। এই এক দাম সব ব্যাংক মেনে চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই প্রতি ডলারের দাম ৯০ টাকার বেশি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলারের সংকট কাটাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে সভায় বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির।ত
সভা শেষে আগামী রোববার থেকে প্রতি ডলারের দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী, রপ্তানি বিল নগদায়নে ডলারের দাম হবে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা দরে, প্রবাসী আয় আনা হবে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে, আন্তব্যাংকে ডলার কেনাবেচা হবে ৮৯ টাকা ৮৫ পয়সা দরে ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হবে ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সা হিসেবে।
সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন, সংকট কাটাতে সভা ডাকা হয়েছিল। সভার সিদ্ধান্তে সংকট আরও বাড়বে। কারণ, এত কম দামে প্রবাসী আয় বৈধ পথে দেশে আসবে না। ডলারের দাম কম হওয়ায় রপ্তানি আয়ও বাধাগ্রস্ত হবে। বাস্তবতাকে স্বীকার না করে এখনো ৯০ টাকার নিচে ডলারের দাম বেঁধে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও বাস্তবে তা ৯৫ টাকার বেশি।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংকট কাটাতে নিয়মিত ভিত্তিতে রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। রপ্তানিকারকদের নিজ ব্যাংকে ডলার নগদায়ন করতে হবে। বাফেদা ও এবিবি ডলারের এক মূল্য নির্ধারণ করে দেবে, যা মেনে চলবে সব ব্যাংক। এই দামেই প্রবাসী আয় আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলারের দাম পর্যালোচনা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা দাম বলা হলেও বাস্তবে এই দামে কোনো ডলার লেনদেন হচ্ছে না। ডলারের দাম ৯৫ টাকার ওপরে চলে গেছে। এ জন্য ডলারের বাস্তবভিত্তিক দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজার বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করবে ব্যাংকগুলো। সবাই তা মেনে চলবে। এর একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়ে সভা থেকে উঠে যান গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব কর্মকর্তা। এ সময় ব্যাংকাররা ৯২ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে দাম নির্ধারণের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। কিছুক্ষণ পর এবিবির চেয়ারম্যানকে ডেকে গভর্নর বলেন, ডলারের দাম কোনোভাবেই ৯০ টাকার ওপরে নির্ধারণ করা যাবে না। এরপর ব্যাংকাররা সর্বোচ্চ দাম ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন, যা আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবেও
সভায় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন এবং বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানসহ দুই কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ব্যাংকের এমডিদের গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়।
তবে একটি ব্যাংকের এমডি প্রথম আলোকে এ নিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে প্রবাসী আয় কমতে পারে।
আমদানি পণ্যের দাম ও জাহাজভাড়া বাড়ায় ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এতে ডলারের সংকট তৈরি হচ্ছে। সংকট সামলাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গতকাল প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো ৯৫ টাকা দরে প্রবাসী আয় আনছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। ফলে আমদানি পণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে।
এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর চাপে বাড়ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক গাড়িসহ কিছু বিলাসপণ্য আমদানিতে ৭০ শতাংশ নগদ জমার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৩৫টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply