ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। 😥😥
শায়খ হাফেজ সাঈদ বিন জামিল তিনি জামেয়া রাহমানিয়া মৌলভীবাজার’র প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী সাহেবের বড় ছেলে।
বর্তমানে তিনি আরব আমিরাতের খোরফাক্কানে “আব্দুর রহমান আদ্দাখিল” জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
মৌলভীবাজার জেলার এক কৃতিমান, সিলেটের অহংকার।
গোটা আরবে বাংলাদেশের মূখ উজ্জলকারী এক কোরআনের পাখি। উনার কন্ঠের সম্মোহনী ক্ষমতা খুব বেশী। সহজেই যেকোন শ্রোতা উনার তেলাওয়াতে আকৃষ্ট হত। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতো সবাই।
অনেকে আজোরে চোখের পানি ফেলত কোরআনের মায়াময় সূরে বিমোহিত হয়ে। মরু প্রান্তর সবুজ শ্যামল হয়ে উঠতো সে কন্ঠের রুহানীতে।
আমরা মনে করতাম আমাদের একজন শায়খ আফাসী,শায়খ সুদাইস,শায়খ শুরাইম ছিলেন। তিনি আমাদের গর্বের ধন।
টিভি পর্দায় বাংলাদেশী হাফিজের তেলাওয়াত আবার আরবের মেহরাবে! সত্যিই গর্বে বুক ভরে যেত।
প্রবাসী বাংলাদেশী উনাকে দৃষ্টান্ত মনে করতো উনাকে দিয়ে উদাহরণ দিতো। গর্ব করতো। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষরাও আরবীদের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতো আমাদের এই ফুটন্ত সুরভিত পুস্পকে।
অনেক নবীন হাফেজ উনার লেহযা লকল করে তেলাওয়াত করতো।অনেকে নিজের তেলাওয়াত সহীহ ও সুনিপুণ করার জন্য বেছে নিতো উনার লেহযা। কি মায়াময়,সাবলিল কোমল এক বেহেশতী সূর মিশেছিল উনার কন্ঠে।
উনার জন্ম আরব আমিরাতে।
চরম মেধাবী নম্র, ভদ্র,মার্জিত একজন আলেমও ছিলেন তিনি। আরব আমিরাতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে পুরুষ্কার লাভ করে ইলম অর্জন করেছেন। আরবদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
উনার সুনাম সুখ্যাতি আরো ব্যাপ্তি হতো বিশ্বব্যাপী এটা অনেকেই ধারনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষণজন্মা এক বেহেশতী পাখি।
২০০১ সালে আন্তর্জাতিক কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা খোরফাক্কান আরব আমিরাতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
২০০২ সালেও আন্তর্জাতিক তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা খোরফাক্কান আরব আমিরাতে প্রথম স্থান অর্জন করেন ।
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা আবুধাবি তে প্রথম স্থান অর্জন করেন ।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা দিব্বা তে প্রথম স্থান অর্জন করেন ।
২০১৫ সালে সুন্দর তেলাওয়াত নামে দুবাই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ।
এছাড়া আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
বিগত তিন বছর ধরে আজমান শেখের পক্ষ থেকে আজমান গভর্মেন্টের আমন্ত্রণে রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানোর সুযোগ হয়েছে, যেখানে আরব বিশ্বের এবং মক্কা মদীনার প্রসিদ্ধ ক্বারী সাহেবদের আমন্ত্রণ করা হয়। প্রতি বছর তিনি রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য কয়েক শেখের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পান।
তিনি প্রথম ও একক বাংলাদেশি যার কন্ঠে ৩০ পারা কোরআন তেলাওয়াত আরব আমিরাত -শারজা- কোরআন রেডিও FM রেকর্ড করে সম্প্রচার করে এবং তাদের মাধ্যমে রাসুল খাইমা রেডিও FM ও বাহরাইন রেডিও FM সম্প্রচারিত করতেছে।
প্রতি রমজানে উনাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের পক্ষথেকে পুলিশের বিশেষ সিকিউরিটি প্রদান করা হয় যা আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য একটি গৌরবের বিষয়।
বাংলাদেশে উনার অনেক অবদানও রয়েছে। স্বীয় পিতার প্রতিষ্টিত জামেয়া রাহমানিয়ার নায়বে মুহতামিম ছিলেন তিনি। মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নীত করা, গরীব অসহায় ছাত্রদের নির্ভিগ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ছিল খুব বেশী । সব সময় দেশের কথা চিন্তা করতেন, মাদরাসার উন্নতি অগ্রগতির কথা চিন্তা করতেন।
প্রতি বছর দেশে আসতেন দেশের টানে। জামেয়া রাহমানিয়া মৌলভীবাজারে অনেক বড় ইসলামী সম্মেলন করতেন দেশের খ্যাতিমান আলেমদের আমন্ত্রণ করা হতো। বড় বড় আলেম বুযুর্গদের হৃদয় ভরিয়ে দিতেন তিনি সুমধুর কন্ঠের তেলাওয়াতে।
উনার অনেক স্বপ্ন ছিল। বাকি ছিল আরো অনেক কাজ। বয়স এখনও ৪০ হয়নি সবে মাত্র সংসার সাজছে। ৪ জন সন্তানের জনক। সব ছোট ছেলের বয়স মাত্র ১ মাস। সন্তানরা হোক পিতার মত। তারা পাবে না পিতার সুশীতল ছায়া। তাদের ছায়া হবে আল্লাহর রহমতের সুবিশাল অনিঃশেষ ছায়া।
দেশে আরব বিশ্বের মত একটি মান সম্মত মাদরাসা হবে সেই স্বপ্ন লালন করতেন তিনি।
তিনি এভাবে চলে যাবেন কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
সবি আল্লাহর ইচ্ছা কখন কাকে ডেকে নিবেন কেউ বলতে পারে না।
তিনি চলে গেছেন, পৃথিবীতে যতদিন ছিলেন চলার পথে কিছু ভূল হতে পারে। সব ভূল ক্ষমা করে কোরআনের উসিলায় আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতে ফেরদৌস দান করেন।
Leave a Reply