1. tarekahmed884@gmail.com : adminsonali :
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

খাসিদের জীবনাচারে ‘বদলের হাওয়া’

  • Update Time : সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৫৭২ Time View

দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম

অনেক দিন ধরেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় একটু একটু করে বদলের আঁচ পড়েছে বাড়িঘরের ধরনে, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, ভাষা, সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানে। এরই মধ্যে ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। কিছু কিছু এখন হারানোর পথে।

এই বদলের স্রোত থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসি (খাসিয়া) জনজীবনের ভাষা-সংস্কৃতি, সামাজিক শাসন-রীতি, ঐতিহ্যকে রক্ষা দিনে দিনে কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে খাসিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মৌলভীবাজার জেলার ছয়টি উপজেলায় খাসিদের ৭৩টি পুঞ্জি (গ্রাম) আছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার জনগোষ্ঠীর বাস।

খাসিপুঞ্জির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর অরণ্যের ভেতর তাঁরা গড়ে তুলেছেন এক আলাদা জীবনধারা। আছে নিজেদের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, সামাজিক রীতিনীতি, সাংস্কৃতিক নানা দিক। খাসিয়া পান চাষের মাধ্যমে চলে তাঁদের জীবিকা।

বহুকাল ধরে টিলায় কাঠ ও বাঁশের তৈরি মাচা ঘরেই বাস করতেন খাসিরা। এসবের জায়গা এখন নিয়েছে পাকা ঘর। কারণ, গাছ-বাঁশের সংকট। অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়িত্বের দিক ভেবেও পাকা ঘর উঠেছে। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। কারণ পাহাড় থেকে অনেক প্রাকৃতিক উদ্ভিজ-প্রাণ হারিয়ে যাওয়া এবং জীবনযাপনের ধরনে বদল। খাবারের তালিকায় ছিল বিভিন্ন ধরনের ‘চিয়া টেট’ (বুনো মাশরুম)। এর একটা আছে মাটি ফেটে বেরিয়ে আসা। এটা খুবই সুস্বাদু। একটি আছে পচে যাওয়া গাছে জন্ম নেওয়া। অন্যটির জন্ম বাঁশবাগানে। প্রাকৃতিক এসব মাশরুমের মধ্যে কিছু আছে বিষাক্ত। এটা তাঁরা দেখেই চিনতে পারেন। আরেক খাবার হচ্ছে ‘চিয়া সলউয়ি’ (লাল ডুমুরের সবজি) ও ‘চিয়া লেছিট’ (ডুমুর সবজি)। লাল ডুমুরের কচি পাতা একটি অন্যতম সবজি। চিয়া লেছিটের ফুল খাওয়া হয়। এ ছাড়া আছে চিয়া ছ্রও শমেন (একলা কচু), চিয়া লেকেছিয়াং (হলুদগাছের মতো একধরনের সবজি), চিয়া কেং (আরেক ধরনের সবজি) এবং চিয়া ছ্রা (বট সবজি)। এগুলো এখনো তাঁরা খেয়ে থাকেন। কিন্তু নিয়মিত খাবারের তালিকাতে নেই। এগুলোর প্রাপ্তি কিছুটা কমায় অনিয়মিত হয়েছে।

খাসি পুরুষেরা আগে সাদা গেঞ্জি আর ধুতি পরতেন। এখন তা দেখাই যায় না। লুঙ্গি, প্যান্ট-শার্টই এখন প্রধান পোশাক। তবে নারীরা আগের মতোই ঘরে ডিয়া কিয়াং (ওপর-নিচে একপাট কাপড়) পরেন। অনুষ্ঠানাদিতে পরেন ডিয়া কেরছা (দুই পাটের কাপড়)। খাসিরা বাড়িতে নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলেন ঠিকই। কিন্তু সেই ভাষায়ও ঢুকেছে অন্য ভাষার শব্দ। যাঁরা লেখাপড়া করেছেন, তাঁরা বাংলা ও খাসি মিশিয়ে কথা বলছেন। চর্চার অভাবে খাসি ভাষার অনেক শব্দ ও শব্দের অর্থ ভুলে যাচ্ছেন অনেকে।

বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের মহাসচিব ও খাসি নেতা ফিলা পতমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাসিদের আদি ধর্ম নিয়ামত্রে। যার মধ্যে অনেক ধরনের প্রকৃতি পূজা ছিল। ধর্মকেন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চাই হতো বেশি। এখন এগুলো আর হয় না। ৯০ ভাগের বেশি খাসি এখন ক্রিশ্চিয়ান।’ ফিলা পতমি বলেন, ‘বদলানোর হাওয়া লেগেছে অনেক কিছুতে। মাতৃতান্ত্রিক প্রথাও এখন নড়বড়ে। শিক্ষিত তরুণেরা আর মেয়ের বাড়িতে যেতে চাইছেন না। কিন্তু এসব তো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমাদের স্বাতন্ত্র্য। এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা, সংরক্ষণ প্রয়োজন।’

সামাজিক–সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য একাডেমি প্রয়োজন বলে মনে করেন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও আদিবাসী নেতা জিডিশন প্রধান সুছিয়াং। গতকাল তিনি প্রথম

আলোকে বলেন, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সামাজিক ব্যবস্থা যদি বিলুপ্ত হয়ে যায়, আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo   Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo   Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo   Open photo

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SonaliKantha
Theme Customized By BreakingNews