দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম
করোনা নিয়ে রাজশাহীর গ্রামের মানুষের সুর পাল্টেছে। এখন তাঁরা মনে করছেন, গ্রামের মানুষেরও করোনা হয়। তাঁদের কাছে এখন মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সেই মাস্ক তাঁরা মুখে না পরে রাখেন পকেটে। পুলিশ দেখলেই মুখে লাগান মাস্ক। করোনায় এখন গ্রামের মানুষও মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালে গ্রামের রোগীই এখন বেশি। এই বাস্তবতায় গ্রামের মানুষের মনোভাবে এ পরিবর্তন এসেছে। তবে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের অনেকেই আগের মতোই বলছেন, তাঁদের করোনা হবে না। তাঁরা খোলা মাঠে রোদে কাজ করেন। তাঁদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে।
গত শক্রবার রাজশাহীর তিনটি উপজেলার দুটি বাজার ও চারটি গ্রাম ঘুরে সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে করোনা নিয়ে তাঁদের পরিবর্তিত ভাবনার এই চিত্র পাওয়া গেছে।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িহাট গ্রামের হাটবার ছিল শুক্রবার। সকালে এই হাটে ঢুকতেই দেখা যায়, দুই সারিতে নয়জন মুচি বসে আছেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। উপজেলার খরচাকা গ্রামের মুচি নীরেন্দ্রনাথকে (৬৫) মাস্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ভয় পেয়ে যান। বলেন, রাস্তায় আসার সময় পড়ে গেছে। আর তোলা হয়নি। তারপর যখন বুঝলেন সঙ্গে পুলিশ নেই। তখনই ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘করোনা নাই, ভালোই তো আছি। অসুখ–বিসুখ নাই।’
হাটে ফল বিক্রি করছিলেন রাজশাহী কোর্ট এলাকার মুক্তার আলী (৩৫)। মাস্কের কথা জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘একটা দেন।’ নাম জানতে চাইলে বলেন, ‘কয়জনের নাম লিখবেন। তাকায়ে দেখেন হাটে কারও মুখে মাস্ক নাই। আর আমাদের কথা লিখে কী করবেন? বড়লোকদের কথা লেখেন। আমরা কইরে খাচ্ছি।’
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় কলার হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। বিকেলে এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, কলা কেনাবেচা, গাড়িতে তোলা এই নিয়ে হাটুরেদের ভীষণ ব্যস্ততা। কারও মুখেই মাস্ক নেই। দু-একজনের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও তা থুতনির নিচে নামানো ছিল। খোঁজ করতেই পাওয়া গেল হাটের ইজারাদার জয় আহাম্মেদকে। তাঁর মুখেও মাস্ক নেই। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে পরে বললেন, করোনার ব্যাপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। এখন গ্রামেগঞ্জে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি হাটের ব্যাপারীদের উদ্দেশে হাঁক দিয়ে বললেন, ‘এই সবাই মাস্ক পরো।’
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের একটি আমবাগানে ঝুড়িতে আম সাজাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম (৩০)। তিনি বলেন, আগে গ্রামের মানুষের ধারণা ছিল করোনা গ্রামে আসবে না। শহরের মানুষের হবে। এখন গ্রামেও করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের মানুষের মধ্যেও করোনার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাহলে কারও মুখে মাস্ক নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরিব মানুষ পেটের দায়ে কাজ করছেন। তাঁরা মাস্কের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তবে তাঁর কর্মচারী তুহিন আলী বললেন, অন্য কথা। তিনি বললেন, গ্রামের মানুষের করোনার কোনো ভয় নেই। ভয় শুধু পুলিশকে। পুলিশ এলে সবাই পালান।
পুঠিয়া উপজেলার হাতিনাদা গ্রামের মাঠে চিচিংগার জমিতে কাজ করছেন মালিকসহ কয়েকজন শ্রমিক। মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন (২৫) বলেন, ‘আমরা করোনার ব্যাপারে খুবই সচেতন। আমাদের গ্রামে কোনো করোনা নেই।’
নন্দনপুর গ্রামের একটি চায়ের দোকানে চারজন লোক বসেছিলেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই দুজন পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরলেন। তবে ইসরাইল হোসেন (৫০) বললেন, জামা বদল করার সময় মাস্ক ওই জামায় থেকে গেছে। আনতে খেয়াল নেই।
উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি ভ্যানে পাঁচজন নলকূপ মিস্ত্রি যাচ্ছিলেন। তাঁদের একজনের মুখে মাস্ক ছিল, কিন্তু থুতনিতে নামানো। বাকিদের ছিল না। ভ্যানের চালকও একজন মিস্ত্রি। তিনি নিজের নাম না বলে বললেন, ‘আমরা অত বুঝি না। শহরের কাজ করতে গিছিলাম। শহরের রাস্তায় মাস্ক পরেই আইছি। গ্রামের রাস্তায় নামার পর মাস্ক খুলে রাখিছি।’
পুঠিয়ার কৃষ্ণপুর গ্রামে চার নারীকে পাওয়া গেল। তাঁরা জ্বালানির খোঁজে বের হয়েছেন। বাঁশের লম্বা লাঠি দিয়ে গাছের মরা ডাল ভাঙছেন। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁদের একজন ঝাঁজালো গলায় বললেন, ‘আমাদের করোনা হবে না। যাদের হচ্ছেÑহচ্ছে। তারা এসি রুমে থাকে। আমরা মাঠে কাজ করি। আমাদের গা দিয়ে ঘাম ঝরে। আমরা এ জন্য মাস্কও ব্যবহার করতে পারি না।’ পাশ থেকে আরেকজন নারী বলে উঠলেন, ‘আমার কাছে মাস্ক আছে। হাটে–বাজারে গেলে পরে যাই।’
বাঘা উপজেলার নওটিকা গ্রামের মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বয়েজুল ইসলাম বলেন, তাঁদের গ্রামের মানুষের করোনা ধরা পড়েছে। তারপরও কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না। কেউ মাস্ক পরতে আগ্রহী না। তিনি মুসল্লিদের নিজের টাকায় চারবার মাস্ক কিনে দিয়েছেন। তাঁরা শুধু নিয়ে যান, পরেন না।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে শুধু জরিমানা করে করোনা ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ মাস্ক পরতে চান না।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে জানাই সকলকে ঈদ মোবারক ঈদের শুভেচ্ছা আমাদের প্রতিষ্টান এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকে রইল অবিরাম ভালোবাসা ঈদের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে জানাই সকলকে ঈদ মোবারক ঈদের শুভেচ্ছা আমাদের প্রতিষ্টান এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকে রইল অবিরাম ভালোবাসা ঈদের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে জানাই সকলকে ঈদ মোবারক ঈদের শুভেচ্ছা আমাদের প্রতিষ্টান এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকে রইল অবিরাম ভালোবাসা ঈদের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক
Leave a Reply