রাজধানীর ফার্মগেটের ‘গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলের’ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেটি বেলা ১১টার দিকে টিকা দেওয়ার কেন্দ্রে এসেছিল। বাড়ি পরীবাগে। আর টিকা কেন্দ্র বনানীর চিটাগাং গ্রামার স্কুল। বেলা ১০টার আগে বাড়ি থেকে রওনা হতে হয় ছেলেটিকে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর ছেলেটি জানল, টিকা শেষ। কাল বৃহস্পতিবার আবার আসতে হবে। গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের আজ বুধবার চিটাগাং গ্রামার স্কুলে টিকা পাওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কয়েকশ শিক্ষার্থীকে ফিরতে হয় টিকা না পেয়েই। এ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড স্কুলের সামনে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের ফটকে ধাক্কাধাক্কি করে। ক্ষোভ জানান অভিভাবকেরা। পুলিশ আসে। কিন্তু সবই অসাড়।
এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেটি বলছিল, ‘আজ প্রায় সারা দিন শেষ হলো। আব্বু অফিস ছুটি নিয়ে এসেছেন। আবার কাল ছুটি নিতে হবে। আমাকে আবার কাল আসতে হবে। আমাদের আগে বলে দিলেই হতো।’
কে কাকে বলে দেবে, কার বা কাদের সিদ্ধান্তহীনতার জন্য এতগুলো শিক্ষার্থীকে ভোগান্তি পোহাতে হলো—তা নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ। এখানে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। টিকা দেওয়ার নোটিশটির সঙ্গে যে মুঠোফোন নম্বরটি ছিল তা টিকা দেওয়ার শুরু সময় থেকে অর্থাৎ বেলা ১২টা থেকেই বন্ধ। টিকা দেওয়ার সময় ছিল বেলা তিনটা পর্যন্ত।
আজ বেলা ১১টার দিক থেকেই শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায় চিটাগাং গ্রামার স্কুলের রাস্তায়। সেখানে দীর্ঘ সারি। কোথাও বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সড়কের মাঝখানে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়। আর তাদের অভিভাবকেরা রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে থাকেন। সারি এগোয় আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোন অভিভাবকেরা। এমনই চলছিল।
একপর্যায়ে বেলা দুইটার একটু পরেই ‘আজকের জন্য টিকাদান কার্যক্রম সমাপ্ত’ লেখা লাল রঙের ব্যানার টানানো হলো। তখনো দীর্ঘ সারি। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামার স্কুল ও সায়েন্স স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, টিকা শেষ হয়ে গেছে। কাল আসতে হবে বেলা নয়টায়। এ ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
ফার্মগেট থেকে আসা সুলতানা নাহার বলেন, ‘সময় আর টাকা নষ্ট করে অপেক্ষার এই ফল কেন? স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেই পারত আজ কত জনকে টিকা দেবে?’
এখানে দাঁড়িয়ে থাকা গবর্নমেন্ট সায়েন্স স্কুলের শিক্ষক মান্নান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক হাজার শিক্ষার্থীকে আসতে নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু টিকা শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।’
গোলযোগের একপর্যায়ে গ্রামার স্কুলের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেতর থেকে এক শিক্ষক বললেন, ‘টিকা শেষ হলে আমরা কী করব? আপনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোক আছে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’
তাঁর মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন পাঠান, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। এ কথা জানান গ্রামার স্কুলের এক শিক্ষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামার স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, সায়েন্স স্কুলের কাছে এক হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা এর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী পাঠিয়েছে। তাদের এক হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পর টিকা শেষ হয়ে গেছে।
তবে গবর্নমেন্ট সায়েন্স স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তারের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের কাছে তালিকা চায় এক হাজার শিক্ষার্থীর। আমরা সেই অনুযায়ী এক হাজার শিক্ষার্থীকে এসএমএস পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে সকলে যায়নি। হয়তো ৮০০’র মতো গিয়েছিল।
তারপরও ৪০০’র বেশি শিক্ষার্থী টিকা পায়নি। আগের দিন (মঙ্গলবার) একটি কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে টিকা দেওয়া হয়। তাদের টিকা দেওয়া শেষ হয়নি। তাই ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য টিকায় ঘাটতি দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজধানীর এতগুলো স্কুলে টিকা দেওয়া হচ্ছে কোথাও সমস্যা হচ্ছে না। এই চিটাগাং গ্রামার স্কুলে গতকালও সমস্যা ছিল আজও হয়েছে।’
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই ভোগান্তির তাহলে দায় কার, এ প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে দুই হাজার টিকা দেওয়ার কথা। আমরা তাই দিই। আজও দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বরং ১০০ বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গবর্নমেন্ট সায়েন্স স্কুল থেকে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠানো হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
চিটাগাং গ্রামার স্কুলের টিকা দানের সমস্যা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান শামসুল হক।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply