অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। তবে এই শেষ ম্যাচ শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের, বাংলাদেশের ক্রিকেট তো আর এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না!
কথাটা দুভাবে বলা যায়। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। অথবা বিজ্ঞাপনের ভাষা ধার করে বলা, ‘শেষ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে শেষই ভালো…।’
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ নিজেদের শেষ ম্যাচটাকে ‘উদ্যাপন’ই করতে চাইবে বাংলাদেশ দল। উদ্যাপন বলতে জয়ের উৎসবে ভেসে উদ্যাপন। যেন আগামীকাল সকালে দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে পাখা মেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের বিমানে শুধুই শোকাবহ পরিবেশ না থাকে। ঢাকায় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছ থেকে আসা প্রথম প্রশ্নটা যেন শুধুই ব্যর্থতার কারণ দর্শানো নোটিশের মতো না শোনায়। বাড়ি ফেরার অভ্যর্থনায় প্রিয়জন যেন বলতে পারে, ‘মন খারাপের কিছু নেই, অস্ট্রেলিয়াকে তো হারিয়ে এসেছ!’
আলোর শহর দুবাইয়ে জৈব সুরক্ষাবলয়ের নিভৃত জগৎটা বাংলাদেশ দলের জন্য হতাশার অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল একের পর এক হারে। কখনো জয়ের কাছে গিয়ে হার, কখনো লজ্জার হার। ওমান, পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে পাওয়া প্রথম পর্বের দুই জয়কে এখানে আমলে আনা হচ্ছে না এই কারণে যে ওই দুটো ম্যাচ জিততে না পারাটাই বরং হতো নিজেদের প্রতি ক্রিকেটারদের আরও বেশি অন্যায়। তবে এমন বিষাদের বিশ্বকাপের শেষ দৃশ্যেও বাংলাদেশ দল পারে রাতের বুর্জ খলিফার মতো ঝলমলে হয়ে উঠতে, আমিরাতপ্রবাসীদের একটি জয় দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে উল্লাস করার উপলক্ষ দিতে। সে জন্য আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জয় চাই—অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়!
কাজটা খুবই কঠিন। আবার সহজও তো! কঠিন এই কারণে যে এই অস্ট্রেলিয়া দলটা বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশের কাছে ৪-১-এ সিরিজ হারা অস্ট্রেলিয়া নয়। তিন ম্যাচে দুই জয় নিয়ে এই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যাশী এক দল। অন্য দিকে মাঠের হার আর মাঠের বাইরে থেকে আসা সমালোচনার তিরবিদ্ধ বাংলাদেশ দল যেন হতাশার ভারে আরব সাগরে ডুবন্ত কোনো তরি!
আর সহজ এই কারণে যে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের আর হারানোর কিছু নেই। যা হারানোর, সবই তো হারিয়ে গেছে! খেলোয়াড় তালিকার দিকে তাকানোর দরকার নেই, বাংলাদেশ দল আজ শুধু অস্ট্রেলিয়ার নামটাই দেখুক; যে নামের একটা দলকে কদিন আগেই সিরিজ হারের জ্বালা উপহার দিয়েছে তারা। পুরো বিশ্বকাপেই যেটা পারেনি দল, আজ সেটাই করে দেখাক বাংলাদেশ—খেলুক নিজেদের খেলাটা।
কাল বিকেলের টিম মিটিংয়ে এবং তারও আগে সকালে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ঢাকা থেকে মুঠোফোনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কথোপকথনেও শুধু এই একটা চাওয়ারই প্রতিধ্বনি উঠেছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যতই খারাপ খেলুক, এটা তো সত্যি যে এর চেয়ে ভালো খেলার সামর্থ্য দলটার খেলোয়াড়দের আছে। শেষ টিম মিটিংয়ে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো খেলোয়াড়দের সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। মুঠোফোনে অধিনায়ককেও সে কথাই বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
মুঠোফোনে কাল প্রথম আলোকেও বিসিবি সভাপতি বলছিলেন, ‘এই মাহমুদউল্লাহ, এই মুশফিক, এই সাকিব-মোস্তাফিজরাই আমাদের ম্যাচ জিতিয়েছে। এবার তারা কেন কেউ পারল না, সেটা বোধগম্য নয়। আমি তবু মাহমুদউল্লাহকে বলেছি, সব ভুলে শেষ ম্যাচে অন্তত তোমরা নিজেদের খেলাটা খেলো। হার-জিত পরে, তোমরা আগে তোমাদের সামর্থ্যটা দেখিয়ে আসো। আর কিছু চাই না।’
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা ক্ষতচিহ্ন হয়েই থাকবে, কিন্তু এটাও ঠিক—বাংলাদেশের ক্রিকেট এখানেই শেষ নয়। আজকের শেষ ম্যাচটা বরং হতে পারে নতুন পথের দিকে প্রথম পদক্ষেপ। বিশ্বকাপের পর নতুন শুরুর প্রেরণা বাংলাদেশ খুঁজে নিক এই ম্যাচ থেকেই।
আশাটা নিশ্চয়ই খুব অবাস্তব মনে হচ্ছে। কিন্তু খাদে পড়ে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে আপনার বিপন্ন মনেও কি জেগে উঠবে না অলৌকিক কিছুর আশা! ধরে নিন, সেই অলৌকিক কিছু ঘটানোর জন্যই আজ মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply