ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফর রাহুল দ্রাবিড়ের। একটু ভুল হয়ে গেল! কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায়ই প্রথম বিদেশ সফর নয় দ্রাবিড়ের। গত আগস্টে ভারতের মূল জাতীয় দল যখন ইংল্যান্ড সফরে, তখন ‘আরেকটি’ জাতীয় দল সফর করেছিল শ্রীলঙ্কা। সে দলের সঙ্গে কোচ হিসেবে পাঠানো হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই তারকাকে। বিরাট কোহলিদের কোচ হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার শুরুটা দ্রাবিড়ের তখনই হয়ে গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে শেষ অ্যাসাইনমেন্ট ছিল রবি শাস্ত্রীর। বিশ্বকাপের পরপরই দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে শাস্ত্রীর উত্তরসূরি হিসেবে আনুষ্ঠানিক পথচলার শুরুটা হয়েছে দ্রাবিড়ের। প্রথম দায়িত্বেই দেখিয়েছেন তাঁর প্রভাব। এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন ইতিহাস গড়তেই কোহলিদের নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে কখনোই সিরিজ জেতেনি ভারতীয় দল। দ্রাবিড়ের অভিভাবকত্বে সেই নতুন ইতিহাস গড়ার বজ্রকঠিন সংকল্প এখন ভারতের। সংকল্পটা দ্রাবিড়েরও।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নেমেই সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে অনুশীলন শুরু করেছে ভারতীয় দল। বিসিসিআইয়ের টুইটার হ্যান্ডল সুপারস্পোর্ট পার্কে ভারতের অনুশীলনের কিছু ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করেছে। সেখানে খুব ভালোভাবেই বোঝা গেছে দ্রাবিড়ের সংকল্পের মাত্রাটা। বোঝা গেছে, সেটি ছড়িয়ে দিয়েছেন গোটা ভারতীয় দলের মধ্যে।
এ নিয়ে টানা তিন দিন সেঞ্চুরিয়নে অনুশীলন করল ভারত। অনুশীলনে অনেক ছবির মধ্যে একটি দৃশ্যপট কারোরই নজর এড়াতে পারেনি। সেটি হচ্ছে টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে দ্রাবিড়ের ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ব্যাটিংয়ের স্ট্যান্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কোহলি। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে কিছু বলছেন দ্রাবিড়। বেশ কয়েক মাস ধরেই ব্যাট হাতে কোহলি ঠিক তাঁর মধ্যে নেই। ২০১৯ সালের পর আর সেঞ্চুরি পাননি। কোহলির ক্রমাগত বাজে খেলে যাওয়াটা ভারতীয় দলের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খারাপ অবস্থা কাটাতে এ মুহূর্তে কোহলি মরিয়া। সে জন্য দ্রাবিড়ের চেয়ে ভালো শিক্ষক আর তিনি কোথায় পেতেন।
কোহলিকে নিশ্চয়ই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই পরামর্শ দিয়েছেন দ্রাবিড়। তাঁকে অবশ্যই বলেছেন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে। খেলোয়াড়ি জীবনে ফর্ম হারিয়ে ফেললে দ্রাবিড় তো তা-ই করতেন। নিজের ওপর বিশ্বাস বলতে, এটা ভাবা যে কয়েকটি ম্যাচে সেঞ্চুরি বা ফিফটি না পেলেই একজন ভালো ক্রিকেটার ‘খারাপ’ হয়ে যায় না। যে খেলোয়াড়টির ফর্ম খারাপ হয়ে গেছে, তাঁর ফর্ম তো একসময় ভালো ছিল। সে হয়তো ভালো সময়ে প্রচুর ভালো ইনিংস খেলেছে। দ্রাবিড় নিজেও সেটিই বিশ্বাস করতেন। আর বাজে ফর্ম থেকে ভালো ফর্মে ফিরতেন সেভাবেই।
নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিকে টানা অনেক দিন বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না দ্রাবিড়। এরপর তিনি ফিরেছিলেন বড়সড় একটা সেঞ্চুরি দিয়ে। সেই সেঞ্চুরিটি করে বলেছিলেন সেই বিশ্বাসের কথাই, ‘আমি দেখছিলাম, আমার সবকিছুই ঠিক আছে। ব্যাটে ঠিকভাবেই বল লাগছিল। কিন্তু ইনিংসটাকেই বড় করতে পারছিলাম না। নেট অনুশীলনের সময় দেখতাম, বলের লাইনে ঠিকই আমার ব্যাট যাচ্ছে, আমার পা-ও ঠিকভাবেই নড়ছে। কেবল রানটাই পাচ্ছিলাম না। দলের কোচকে (তখন কোচ ছিলেন গ্যারি কারস্টেন) এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনিও বললেন, “সব ঠিক আছে। তোমার কাজ হবে কেবল মাঠে গিয়ে যতটা সম্ভব সময় কাটানো।” আমিও সেটিই করতে চাইতাম। আমার স্থির বিশ্বাস ছিল, রান পাওয়াটা কেবল সময়ের ব্যাপার।’
১৯৯৬ সালে ভারতীয় দলের হয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের টেস্ট অভিষেক হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টে দ্রাবিড় অবশ্য দুর্ভাগ্যের শিকার। অভিষেকে সেঞ্চুরি পেতে গিয়েও পাননি—৯৫ রানে ফিরেছিলেন তিনি। শুরুর মন খারাপ, হতাশা পেছনে ফেলে সেই দ্রাবিড়ই টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে করেছেন ২৩ হাজারের বেশি রান।
১৯৯৬ সালের মে মাসে ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন দ্রাবিড়। তিনি সুযোগ পেয়ে যেতেন ঘরের মাঠে ছিয়ানব্বইয়ের বিশ্বকাপেই, কিন্তু সেটি হয়নি। যেদিন ভারতীয় দল ঘোষিত হলো, সেদিন দলে নিজের নাম দেখতে না পেয়ে তাঁর এক সতীর্থকে নিজের লক্ষ্যের কথাটি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘মে মাসে ইংল্যান্ড সফরের আগে চারটি রঞ্জি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। কমপক্ষে তিনটি সেঞ্চুরি করতে হবে।’ দ্রাবিড় সেঞ্চুরি করেছিলেন চার ম্যাচেই। ইংল্যান্ড সফরের দল থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার সুযোগই তিনি রাখেননি। এটাই রাহুল দ্রাবিড়।
ভারতীয় ক্রিকেটাররা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন রাহুল দ্রাবিড়কে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে!
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply