নতুন আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২৪–এ নিষিদ্ধ পণ্য তালিকার শ্রেণি বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আগের আদেশে নিষিদ্ধ পণ্যের শ্রেণি ছিল ১২টি। নতুন আদেশে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬টি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৪ এপ্রিল নতুন এই আমদানি নীতি আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পণ্য আমদানিতে উদার দেশ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে গেলে আমদানি নীতি আদেশ অনুসরণ করতে হয়। তারপরও কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো আমদানি করা যায় না। সরকার তিন বছর মেয়াদি আমদানি নীতি আদেশ জারি করেছে। ২০২১–২৪ সালের জন্য তৈরি নতুন আদেশটি অবশ্য দেরিতেই জারি হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পাওয়ার পরও মাঝখানে একটি মেয়াদ বাদই গেছে। অর্থাৎ ২০১৮–২১ সময়ের আমদানি নীতি আদেশ হয়নি। আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮–এর মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুন। পরেরটি হলে মেয়াদ শেষ হতো ২০২১ সালের ৩০ জুন।
নতুন আমদানি নীতি আদেশের প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগে পুরো কাজটির দেখভাল করছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে যোগ দিয়েছেন।
নতুন আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়নে কেন এত দেরি হলো এবং কেন এবার নিষিদ্ধ পণ্য বেশি—এমন প্রশ্নের জবাবে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে দেরি হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যেটা হয়েছে, ভালো হয়েছে। আর যুগের প্রয়োজনেই নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির শ্রেণি বেড়েছে।
নতুন আমদানি নীতিমালায় যে ২৬ শ্রেণির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চিংড়ি; জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য; পপি সিড ও পোস্তদানা; ঘাস; ওয়াইন লিজ ও আরগোল; ঘন চিনি; কৃত্রিম সরিষার তেল; নিম্নমানের পণ্য অথবা পুরোনো, ব্যবহৃত, রিকন্ডিশন্ড পণ্য বা কারখানায় বাতিলকৃত বা স্টক লটের পণ্য ইত্যাদি।
এ ছাড়া রিকন্ডিশন্ড অফিস ইকুইপমেন্ট অর্থাৎ ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সামগ্রী ও পুরোনো ইলেকট্রনিকস সামগ্রী; সব ধরনের শিল্প স্লাজ ও স্লাজ দিয়ে তৈরি সার ও যেকোনো পণ্য, সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ আমদানি নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তালিকায় আছে ‘স্টকহোম কনভেনশন অন পারসিসট্যান্ট অর্গানিক পলিউটনেস (পিওপি)’–এর আওতাধীন বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও শিল্পজাত দ্রব্য। এসব দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডিডিটি, ডাই-এলড্রিন, এনড্রিন, হেপ্টাক্লোর, মিরেক্স, টক্সফেন, হেক্সক্লোরোবেনজিন, পলিক্লোরিনেটেড বাই-ফিনাইল; হাইড্রোলিক হর্নসহ ৭৫ ডেসিবেলের ঊর্ধ্বমাত্রার সব হর্ন; পলি প্রোপাইলিন ও পলিথিন ব্যাগ; দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ও চেসিসবিশিষ্ট থ্রি-হুইলার যানবাহন অর্থাৎ টেম্পো, অটোরিকশা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের সীমারেখা দেখানো হয়নি এমন মানচিত্র, চার্ট ও ভৌগোলিক গ্লোব, হরর কমিকস, অশ্লীল, নাশকতামূলক সাহিত্য পুস্তিকা, সংবাদ সাময়িকী, পোস্টার, ফটো, ফিল্ম, কাগজপত্র, অডিও-ভিডিও টেপ ইত্যাদি পণ্যও আমদানি নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে।
এদিকে নিষিদ্ধ পণ্যের বাইরেও কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আমদানি করা যায়। নতুন আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফার্নেস অয়েল, সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের মাছ ধরার কারেন্ট জাল, পাঁচ বছরের পুরোনো অধিক গাড়ি আমদানি, তিন বছরের বেশি পুরোনো ও ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে সব ধরনের মোটরসাইকেলসহ এলএনজি ও লিকুইফাইড প্রপেন ও বিউটেনস ছাড়া পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও অন্যান্য গ্যাসীয় হাইড্রো-কার্বন এবং পেট্রোলিয়াম কোক ও পেট্রোলিয়াম বিটুমিন ছাড়া পেট্রোলিয়াম তেলের রেসিডিউ।
আমদানি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সিনেমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ছাড়া উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র সাফটাভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানির বিপরীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে।
নতুন আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের খেলনা ও বিনোদনমূলক পণ্যের ক্ষেত্রে কোন বয়সের শিশুর জন্য প্রযোজ্য, তা উল্লেখ থাকতে হবে এবং প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার ক্ষেত্রে তা ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’ মর্মে রপ্তানিকারক দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদের প্রয়োজন হবে। আগের আমদানি নীতিতে বেসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টার আমদানির উল্লেখ না থাকলেও এবার তা যোগ হয়েছে।
স্ক্র্যাপ ভেসেল আমদানির ক্ষেত্রে শিপিং ডকুমেন্টের সঙ্গে ‘জাহাজে ইনবিল্ট দ্রব্যাদি ছাড়া অন্য কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে না’ মর্মে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র ও আমদানিরকারকের ঘোষণাপত্র দাখিল করতে হবে। সব ধরনের যুদ্ধজাহাজ শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তরবারি ও বেয়নেট ইত্যাদি পণ্য শুধু ব্যবহারকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে আমদানি করা যাবে।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply