করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশব্যাপী নমুনা পরীক্ষা কমছে, পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমে আসছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, করোনা সংক্রমণের এই নিম্নগতি অব্যাহত থাকবে। করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনায়।
অধিদপ্তর ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই এই সাত দিনের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পরবর্তী সাত দিনের অর্থাৎ ৪ থেকে ১০ জুলাইয়ের পরিসংখ্যানের তুলনা করে সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতার তথ্য দিয়েছে। তবে এই সাত দিনে মৃত্যু আগের চেয়ে বেড়েছে। সংক্রমণ কমে এলেও মৃত্যু কেন কিছুটা বাড়ছে বা এখনো মৃত্যু হচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা জনস্বাস্থ্যবিদেরা দিয়েছেন।
২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৮৮ হাজার ৯১৮ জন নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। পরের সাত দিনে অর্থাৎ ৩ থেকে ১০ জুলাই পরীক্ষা করান ৬৭ হাজার ৯২ জন। এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ২৫ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের হারও কমতে দেখা গেছে। ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৩ হাজার ৫১৬ জন। পরের সাত দিনে অর্থাৎ গত সপ্তাহে শনাক্ত হয় ১১ হাজার ১৬৫ জন। পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার কমেছে ১৭ শতাংশ।
সংক্রমণ কমে আসার পর আবার তা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বা উপধরনের সম্পর্ক আছে। গত বছর ডেলটা ধরনের কারণে সংক্রমণ বেড়েছিল। এ বছর সংক্রমণ প্রথমে বেড়েছিল অমিক্রনের কারণে। আর এখন বেশির ভাগই আক্রান্ত হচ্ছেন অমিক্রনের উপধরনের কারণে।
দেশের করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সংক্রমণের হার বাড়তে ও কমতে দেখা গেছে। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর পর থেকে সংক্রমণ ও শনাক্তের হার বাড়তে থাকে। ওই বছর শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩ আগস্ট। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ।
এর পর থেকে সংক্রমণ ধীরগতিতে কমতে থাকে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৫–এর নিচে চলে আসে। তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে শনাক্তের হার ২৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় ওই বছর ৯ এপ্রিল। তারপর আবার কমতে থাকে। পরের মাস থেকে আবার বাড়তে থাকে। ২৪ জুলাই সংক্রমণের হার বেড়ে ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পর থেকে কমতে থাকে। কমতে কমতে শনাক্তের হার আবার ৫ শতাংশের নিচে চলে আসে।
তবে গত বছর ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণ অতিদ্রুত বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটাই এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। এরপর সংক্রমণ কমতে থাকে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে চলে আসে। গত জুনের মাঝামাঝি থেকে আবার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি একসময় থেমে যায়। কিছুদিন শনাক্তের হার কিছুটা স্থিতিশীল থাকে, তারপর কমতে থাকে। আমরা এখন সেই নিম্নমুখী প্রবণতাই লক্ষ করছি। করোনাভাইরাসের নতুন কোনো ধরনের উদ্ভব না হলে সংক্রমণের এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।’
সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক আছে। করোনা মহামারির গত আড়াই বছরে যে সময়ে সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে, মৃত্যুও সেই সময়ে বা তার কাছাকাছি সময়ে বেশি দেখা গেছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে শনাক্তের হার বেশি ছিল, মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই এক মাসে ৬ হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর মে মাসে শনাক্তের হার কম ছিল এবং এই মাসে মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
১১ জুলাই সকাল ৮টা থেকে গতকাল ১২ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত—এই ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৭৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৬৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৯ জন। এ নিয়ে জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে করেনায় ৬৩ জনের মৃত্যু হলো।
মৃত্যু সম্পর্কে মুশতাক হোসেন বলেন, এখন যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁরা দুই বা তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আশা করা যায়, এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুও আরও কমে আসবে।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply