বিশ্বের নামীদামি কোম্পানিগুলোতে চলছে কর্মী ছাঁটাইয়ের মচ্ছব। মূলত ব্যবসায়িক কারণেই তা হচ্ছে। অর্থাৎ, মুনাফা কমে যাওয়া। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু বিভাগের কর্মীরা ছাঁটাইয়ের শিকার হন। যেমন সম্প্রতি মাইক্রোসফট যে ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিল, সেই তালিকায় প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের সংখ্যাই বেশি।
এই বাস্তবতায় মাইক্রোসফটের মানবসম্পদ বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ক্রিস উইলিয়মাস জানালেন, কোম্পানির কোন ধরনের কর্মীরা ছাঁটাইয়ের শিকার হতে পারেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, কোন কর্মীরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। সংবাদমাধ্যম ‘বিজনেস ইনসাইডার’কে ক্রিস বলেন শিল্প কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও এমনকি কোম্পানির কোন বিভাগগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কিছু বিভাগ ও কর্মীদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি।
বিপদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা। ক্রিস বলেন, ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি এসব চুক্তিভিত্তিক কর্মীর। বিষয়টি হচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানি সাময়িক বা বিশেষ প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দেয়। ফলে কোম্পানি যখন বিপদে পড়ে, তখন প্রথমেই এই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ছেঁটে ফেলা হয়—এটাই রীতি।
বিপদের আরেকটি জায়গা হচ্ছে, নতুন বিভাগ বা উদ্যোগ। ক্রিসের দাবি, মূল কোম্পানির ব্র্যান্ডিং ও প্রসার বাড়াতে অনেক দামি কোম্পানি উদ্যোগী হয়। নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানি কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়লে বা মন্দার আশঙ্কা তৈরি হলে, সেই উদ্যোগগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন মালিকদের নজরে থাকে কেবল মূল কোম্পানি, নতুন উদ্যোগ বা প্রকল্প তখন দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের মতো হয়ে যায়।
এরপর বিপদের মুখে থাকেন কোম্পানির ইভেন্ট পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানেই ইভেন্ট নামে আলাদা বিভাগ থাকে। অর্থাৎ, যাঁদের কাজ হচ্ছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা। মন্দার সময় অনুষ্ঠান হওয়ার সুযোগ থাকে না, তাই এ সময় ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েন এই বিভাগের কর্মীরা। ক্রিসের মতে, মন্দা বা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার পর সংস্থাগুলো যেকোনো ধরনের ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বন্ধ করে দেয়।
এ তো গেল বিপদের মুখে থাকা বিভাগগুলোর কথা। একই সঙ্গে নিরাপদ জায়গাও বাতলে দিয়েছেন ক্রিস উইলিয়মস। কোম্পানির দুটি নিরাপদ বিভাগের কথাও উল্লেখ করেছেন মাইক্রোসফটের সাবেক এই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, কেউ যদি কোম্পানির মুনাফা অর্জনকারী বিভাগের কর্মী হন, তা হলে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা খুব-ই কম। আর যদি কেউ সেই বিভাগের বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে কথাই নেই—এমনটাই মনে করেন ক্রিস। কারণ, কোম্পানি জানে, এ ধরনের কর্মীদের বরখাস্ত করা হলে আরও বিপদের মুখে পড়তে হবে। যেমন পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের কর্মী। তাঁরা সরাসরি রাজস্ব আহরণের সঙ্গে যুক্ত। বিপদের সময় এই কর্মীদের ছাঁটাই করার চিন্তা সবার পরে আসবে, এটাই স্বাভাবিক।
মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীরাও সুরক্ষিত বলে মনে করেন ক্রিস। তাঁর মত, কোনো কোম্পানি বিপদের মুখে পড়লেও মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীরা সুরক্ষিত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ছাঁটাইপ্রক্রিয়া চালানোর জন্য সব সময়ই মানবসম্পদ বিভাগ প্রয়োজন। তাঁদের কাছে কর্মীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য থাকে। এ ছাড়া কোম্পানির প্রতিটি বিভাগ সম্পর্কে তাঁরা অবগত। তাই ছাঁটাইপ্রক্রিয়ায় তাঁদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।’
পাশাপাশি মানবসম্পদ বিভাগে কর্মীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে, সেটাও তাঁদের একধরনের সুরক্ষা দেয়। সে কারণে তাঁদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বিশ্লেষণকারী কোম্পানি ক্রাঞ্চবেসের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ৮৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। শুধু প্রযুক্তি কোম্পানি নয়, বেসরকারি খাতের বড় বড় ব্যাংকও কর্মীদের দরজা দেখিয়ে দিচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দিনে গড়ে তিন হাজার প্রযুক্তিকর্মী চাকরি হারাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় কোন ধরনের চাকরির স্থায়িত্ব কত, তা নিয়ে এত কথা বলেছেন মাইক্রোসফটের সাবেক মানবসম্পদ কর্মকর্তা ক্রিস উইলিয়ামস।
ক্রিস উইলিয়ামস বর্তমানে একজন পডকাস্টার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টিকটক’-এ তিনি নিয়ম করে ভিডিও বানান। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply