1. tarekahmed884@gmail.com : adminsonali :
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন

ফুটবল বিশ্বকাপ: মুখ বন্ধে আইএলওতে তদবির, অর্থ ঢেলেছিল কাতার

  • Update Time : সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩
  • ১৩৮ Time View

দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন সামনে রেখে কাতারে শ্রমিক অধিকার নিয়ে যেন তদন্ত না করা হয়, সে জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) ব্যাপক তদবির করেছিল কাতার। সংস্থাটিকে আড়াই কোটি ডলারের তহবিলও যোগান দিয়েছিল তারা। কাতারি কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ে অন্যান্য তৎপরতাও চালিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির এই তৎপরতা ঘিরে এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।

বেশ জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি শীত মৌসুমে বেলজিয়ামে একের পর এক গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। বেলজিয়ামের কয়েকজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তাঁরা বিশ্বকাপের আগে অর্থের বিনিময়ে কাতারের প্রশংসায় মেতেছিলেন। এমনকি দেশটির শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও আড়ালের চেষ্টা করেছিলেন।

অপর দিকে শ্রমিক অধিকার–সংক্রান্ত বিষয়ে আইএলও কীভাবে কাতারের সমালোচনা থেকে সরে দাঁড়াল, তা খতিয়ে দেখেছে নিউইয়র্ক টাইমস। তদন্তে দেখা গেছে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে কয়েক বছর ধরে একটি প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়েছিল কাতার সরকার। ওই কার্যক্রম জাতিসংঘের এই সংস্থাটির মুখ বন্ধ করতে বেশ সহায়তা করেছিল।

বিভিন্ন নথিপত্র এবং আইএলওর সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের হাতে এসেছে কাতারের ওই প্রচারণা কার্যক্রমের তথ্য। দেখা গেছে, ওই কার্যক্রমের আওতায় আইএলওর একজন কর্মকর্তাকে বিনা মূল্যে ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। শ্রমিক অধিকার নিয়ে তদন্ত না করতে চালানো হয়েছিল ব্যাপক তদবির। এমনকি শ্রমিক অধিকার নিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য আইএলওকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল দেওয়া হয়েছিল। আর সবশেষ বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে এসে কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আইএলওর কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারা যেন শ্রমিক অধিকার নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য না করেন, যাতে বিশ্বকাপের ওপর প্রভাব পড়ে।

ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের জন্য ২০১৪ সালে কাতারে ব্যাপক হারে নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ওই কাজে যোগ দেন বহু শ্রমিক। সে সময় ওই শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে আইএলওর কাছে অভিযোগ করেছিল শ্রম অধিকারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)।

অভিযোগ পেলে আইএলও তদন্ত শুরু করতে পারে। তবে সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, এই তদন্ত যেন শুরু না হয়, সে বিষয়ে তদবির করতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে আইএলওর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছিলেন কাতারের কর্মকর্তারা। ফলে তদন্তের প্রস্তাব আনা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

পরে ২০১৬ সালে কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল আইএলও। সেবার কাতার ওই প্রতিনিধিদের বলেছিল, তারা শ্রমিক অধিকার রক্ষায় কিছু আইন প্রণয়ন করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে শ্রমিকদের বিষয়ে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সঙ্গে ছিল আইএলওকে দেওয়া বিশাল ওই তহবিল। এর বিনিময়ে কাতারের দাবি ছিল, দেশটির বিরুদ্ধে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নিতে হবে এবং এ নিয়ে তদন্ত করা যাবে না।

তবে সে সময় তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল বলে মনে করেন আইএলওর গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য মারিয়া ক্লার্ক ওয়াকার। তিনি বলেন, ‘আমি আসলেই এটা বিশ্বাস করি, কাতারে শ্রমিকদের আরও সুরক্ষা দিতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার ছিল। বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আমাদের একটি প্রক্রিয়া আছে। আমাদের সেই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা উচিত।’

বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনে কাতারের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। এই উদ্দেশ্য পূরণে কাতার আইএলওর মুখ বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল বলে মনে করেন বেলজিয়ামের একজন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি। আর কাতারও অর্থের বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কোনো দেশের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে আইএলও, প্রয়োজনে আদালতেও বিষয়টি তুলতে পারে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোনো দেশকে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনকারী তকমা দিতে পারে তারা।

তবে আইএলও বলছে, কাতারের তদবির দেশটির শ্রমিক অধিকার নিয়ে আইএলওর অবস্থানে আলাদা কোনো বদল আনেনি। সংস্থাটির কর্মকর্তারাও নিজেদের সততার কথা তুলে ধরেছেন। বিশ্বকাপের আগে কাতারের শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সুর নরম করাকে কূটনীতির অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

আইএলওর কর্মকর্তাদের অভিমত, কাতারের দেওয়া ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল সংস্থাটির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। আইএলও ও কাতারের ভাষ্য, দোহা শ্রমিকদের অবস্থা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই তহবিল সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অংশ মাত্র। কাতারের দেওয়া এই অর্থ দোহায় অবস্থিত আইএলওর কার্যালয়ে প্রশাসনিক খরচের জোগান দিয়েছিল।

তবে এমন সব দাবি মানতে নারাজ আইএলওর অনেক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। এমনই একজন মারিয়া ক্লার্ক ওয়াকার। আইএলওর গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ক্ষমতাধর ও ধনী দেশগুলোর জন্য অন্যদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে আনা সম্ভব।

২০১৮ সালে দোহায় কার্যালয় খুলেছিল আইএলও। এর পর থেকে দেশটিতে শ্রমিক অধিকারে উন্নতি হয়েছে। কাতারের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। চাকরিদাতারের অনুমতি ছাড়াই এখন তাঁরা চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন। আইএলওর কর্মকর্তাদের দাবি, কাতার সরকারের সঙ্গে তাঁদের সমঝোতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এখন নতুন করে কোনো সমালোচনার অর্থ হলো ওই সফলতাকে ছোট করা।

তবে আইএলও নিজেদের সফলতা দাবি করলেও কাতারে শ্রমিকদের ওপর নিপীড়ন থেমে নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে এখনো শ্রমিকদের ওপর জোরজরবদস্তি করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আসা নির্মাণশ্রমিক ও গৃহকর্মীদের ঋণের জালে ফাঁসিয়ে তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে না বেতন।

এদিকে ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে কাতারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ইউরোপের অনেক রাজনীতিবিদ। নিজেদের এই অবস্থানের বৈধতা দিতে কাতারে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আইএলওর ইতিবাচক বিবৃতির কথা তুলেছিলেন তাঁরা। এমনই একজন গ্রিসের রাজনীতিবিদ ইভা কাইলি। গত নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তিনি বলেছিলেন, আইএলও বলেছে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় কাতার প্রথম সারিতে রয়েছে। এর তিন সপ্তাহ বাদে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রম অধিকারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের (আইটিইউসি) মহাসচিব লুকা ভিসেনতিনিকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে ছুটিতে পাঠায় আইটিইউসি। তদন্তে দেখা যায়, আইটিইউসির মহাসচিব হতে তিনি যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তাতে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল সাবেক এক আইনজীবীর পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ওই আইনজীবী নিজেই স্বীকার করেছিলেন, তিনি কাতারের হয়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমের হাতে আসা একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অক্টোবরে কাতার সফরে যেতে লুকা ভিসেনতিনিকে অর্থ দিয়েছিল কাতার সরকার।

তবে এক বিবৃতিতে লুকা ভিসেনতিনিকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, তাঁকে যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, তা কাতার নিয়ে আইটিইউসির নীতিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। তিনি এখন চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন কি না, সে অপেক্ষায় আছেন। তবে লুকা ভিসেনতিনি যা–ই বলুন না কেন, দোহায় আইএলওর কার্যালয়ের সাবেক প্রধান হউতান হোমায়োনপোর বলছেন, এর ফলে শ্রমিক অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন চলে আসছে, তার বিশাল ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SonaliKantha
Theme Customized By BreakingNews