1. tarekahmed884@gmail.com : adminsonali :
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন

চিনির হাতি-ঘোড়া-মাছ বদলে দিল একটি গ্রাম

  • Update Time : শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১২৫ Time View

দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম

বৈশাখে মিঠাইয়ের ব্যবসা

  • হরিপুর গ্রামে মুরালি, চিড়ার মোয়া, গুড়মাখা খই-মুড়ি, হাতি, ঘোড়া, ফুল, নিমকি, খাজা, মাছ, কদমা, খাগড়াই, বাতাসা ইত্যাদি মিঠাই পণ্য তৈরি হয়।
  • বৈশাখী মেলা, ঈদ, ইসলামি মাহফিল, পূজা, তিথি-পার্বণ উপলক্ষে বেশি বিক্রি হয়।

 

গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে হঠাৎ একবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুরের দোলপূর্ণিমা মেলায় মুড়ি-মুড়কির দোকান নিয়ে বসেছিলেন হরিপুর গ্রামের রণজিৎ চন্দ্র দাস। পাশেই একজন কদমাসহ বিভিন্ন মিঠাই পণ্য নিয়ে বসেছিলেন, যা তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল।

এরপর জয়পুরহাটের বাগজানা বাজারের কালীচরণ মোহন্ত ও কমল মোহন্ত নামের দুই মহাজনের কাছ থেকে কদমা, চিনির হাতি–ঘোড়া (ছাঁচ), বাতাসা, মুড়কি, নিমকি, খাগড়াইসহ রকমারি মিঠাই পণ্য পাইকারিতে কিনে এনে এলাকার বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করতে শুরু করেন রণজিৎ। এই ব্যবসায়ে তাঁর ভালোই লাভ হয়। তা দেখে হরিপুরের গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন মিঠাই পণ্যের ব্যবসায় নামেন। এরই মধ্যে রণজিৎ দাস বাগজানা বাজারের মহাজনদের কাছে গিয়ে হরেক রকম মিঠাই পণ্য তৈরির কাজ শিখে নেন। বানাতে শুরু করেন রকমারি সব মিঠাই পণ্য।

এবারও রণজিতের দেখাদেখি অনেকেই মিঠাই পণ্য বানাতে শুরু করেন। হরিপুর গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নানা পদের মিঠাই পণ্য তৈরি হচ্ছে। বদৌলতে গ্রামটি ইতিমধ্যে ‘মিঠাইপল্লি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই কাজ করে হরিপুরের বহু পরিবারের অভাব দূর হয়েছে, সংসারে সুদিন এসেছে। কারিগর রণজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, ‘মিঠাই ব্যবসার লাভের টাকায় বসতবাড়ির জায়গা কিনেছি, বাড়িও করেছি।’

গত বুধবার বগুড়া সদর উপজেলার হরিপুর ‘মিঠাইপল্লি’তে গিয়ে দেখা যায়, পয়লা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সেখানে কারিগরেরা মুরালি, চিড়ার মোয়া, গুড়মাখা খই-মুড়ি, ফুল, নিমকি, খাজা, মাছ, কদমা, ছাঁচ (হাতি-ঘোড়া), খাগড়াই, বাতাসা ইত্যাদি মিঠাই পণ্য তৈরির কাজে ভীষণ ব্যস্ত রয়েছেন। নামে মিঠাই পণ্য হলেও অধিকাংশ পণ্যই চিনি দিয়ে তৈরি। মিঠাই পণ্যগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ও দূরদূরান্তের পাইকার ও মেলাকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় মিঠাই পণ্যের দাম বেড়েছে। বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কদমা, হাতি-ঘোড়ার ছাঁচ ও বাতাসা ১৪০, নিমকি ১৬০, মুড়ি ৯০, মুড়কি ১২০, খাগড়াই ১৪০ ও জিলাপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতি কেজি কদমা, ছাঁচ ও বাতাসা যথাক্রমে ১০০, মুড়ি ৭০, মুড়কি–নিমকি ৯০, খাগড়াই ১০০ ও জিলাপি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

কোথায় যায় হরিপুরের মিঠাই পণ্য

মিঠাই কারখানার মালিক ও কারিগরেরা জানান, এখানকার মিঠাই পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এখানকার মিঠাই পণ্য যায় ঢাকার রমনার বৈশাখী মেলা, আজিমপুরের মেলা, দোহারের নুরুল্যাপুরের সান্যাল ফকিরের মেলা, ধামরাইয়ের রথের মেলা; চট্টগ্রামের লালদীঘির পাড়ের জব্বারের মেলা; কুষ্টিয়ার লালন মেলা; যশোরের মধুমেলা; ফরিদপুরের পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন মেলা; সাতক্ষীরার গোড়পুকুর মেলা; বরিশালের বানারীপাড়ার সূর্যমণি মেলা; ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া মেলা; দিনাজপুরের চরকাই মেলা, আমবাড়ী মেলা ও গোপালপুর চৌধুরী মেলা; জয়পুরহাটের গোপীনাথপুর মেলা; বগুড়ার পোড়াদহ, গাংনগর ও দাড়িয়াল মেলায়।

এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গার গ্রামীণ মেলা, বৈশাখী মেলাসহ ঈদ, ইসলামি মাহফিল, পূজা, তিথি-পার্বণ উপলক্ষে বিভিন্ন মিঠাই পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

চিনির মূল্যবৃদ্ধি, কমেছে লাভ

বিভিন্ন মিঠাই কারখানার মালিক ও কারিগরেরা জানান, বাজারে গত বছরের তুলনায় চিনি, ময়দা, পাম অয়েল ও গুঁড়ের দাম অনেক বেড়েছে। এতে লাভ কমে গেছে। কারিগর ভবেন্দ্রনাথ দাস জানান, গত বছর ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনির দাম ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তা এখন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বেশি। ৯০ টাকা কেজির পাম অয়েল এখন ১৪০ টাকা আর ৫৬ টাকার গুঁড় ১১০ টাকায় উঠেছে। প্রতি বস্তা ময়দার দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।

সুদিন এসেছে কারিগরদের

হরিপুরের কারখানামালিকদের পাশাপাশি কারিগরদেরও অনেকের সংসারে সুদিন এনে দিয়েছে মিঠাই। রোজগার ভালো হওয়ায় কেউ জমি কিনেছেন, কেউবা কিনেছেন মোটরসাইকেল, পাকা বাড়িও করেছেন কেউ। সে রকমই একজন সুজন চন্দ্র দাস জানান, দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে শৈশব কেটেছে। তাই পড়াশোনা করতে পারেননি। মিঠাই পণ্য তৈরির কাজ করে পাকা বাড়ি করেছেন, দুই বিঘা আবাদি জমি কিনেছেন।

অন্য কারিগরদের মধ্যে কপিল কুমার দাস, তপন দাস, ভবেন্দ্রনাথ দাস, লিটন চন্দ্র, তিক্ষা কুমার দাস, পবিত্র কুমার, সবেশ্বর, প্রশান্ত চন্দ্র, রণজিৎ চন্দ্র দাস, নগেন্দ্র চন্দ্র দাস ও শশাঙ্ক চন্দ্র দাস প্রমুখ জমি কিনেছেন, পাকা বাড়ি করেছেন।

কারিগরদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছেন। এর মধ্যে ভবেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে শুভ কুমার দাস পুণ্ড্র ইউনিভাসির্টিতে কম্পিউটার সায়েন্স অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন। তরণী চন্দ্র দাসের ছেলে রনি কুমার দাস ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ছেন।

তপন দাসের ছেলে তপু পড়ছেন ঘোড়ধাপ কলেজে। রণজিতের ছেলে ভজন কুমার দাস ইংরেজি বিষয়ে অনার্স পড়ছেন সৈয়দ আহম্মদ কলেজে। তাঁর মেয়ে পড়ে কলেজে। সুজন চন্দ্র দাসের ছেলে রোহিত দাস বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo    Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

Open photo

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SonaliKantha
Theme Customized By BreakingNews