একটি বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল একজন, কিন্তু পাস করেনি। আরেকটি মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থী ছিল তিনজন—সবাই ফেল করেছে। ২১ জন পরীক্ষা দিয়ে ১ জনও পাস করেনি—এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে। এ বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের এ রকম ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টিই মাদ্রাসা। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, যার শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পান। গত বছরও ৪১টি মাদ্রাসা থেকে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি। সেবার এ ধরনের বিদ্যালয় ছিল ৯টি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ফলাফলের পর কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়গুলো চলে কীভাবে। শিক্ষা বিভাগ কিসের ভিত্তিতে এগুলোকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি বা স্বীকৃতি দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ‘নানা কারণে’ স্বীকৃতি দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো তদারকি করা হয় না। এ ধরনের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না।
গত শুক্রবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার সারা দেশের ২৯ হাজার ৭১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন।
ফলাফল প্রকাশের দিন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়ে ভবিষ্যতে যেন ভালো করতে পারে, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুটি বিদ্যালয় থেকে এবার কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে একটি হলো গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের পূর্ব লখন্ডা জিরাতলী উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি থেকে ১২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তখন অবশ্য বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছিলেন না।
পরে দেখা হয় বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য তারাপদ মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফল খারাপের কয়েকটি কারণ রয়েছে। একটি অন্যতম কারণ, গ্রামের পাশে তিনটি বিদ্যালয় রয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেখানেই চলে যায়। কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানেই ভর্তি হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও অবহেলা রয়েছে।
অবশ্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন এক অভিভাবক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই বিদ্যালয় থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ১২ জন নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। অন্য ৪ জন অকৃতকার্য হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাঁর প্রশ্ন, যারা নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করল ও কৃতকার্য হলো, তারা কেন বোর্ড পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলো?
এই বিদ্যালয়ে সময়মতো ও ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হরিপদ রায় বললেন, তাঁদের বিদ্যালয় থেকে এবারই প্রথম এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এ জন্য হয়তো সমস্যা হয়েছে।
এবার যে ৪১টি মাদ্রাসা থেকে কেউ পাস করেনি, তাদের একটি টাঙ্গাইলের সখীপুরের ইছাদীঘি দাখিল মাদ্রাসা। এখান থেকে ২১ জন পরীক্ষা দেয়। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মাদ্রাসায় দুটি টিনের ঘর। একটিতে মাদ্রাসার সুপার ও শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। আরেকটিতে ক্লাস হয়।
মাদ্রাসার সহকারী সুপার রুহুল আমিন বললেন, মাদ্রাসায় ১০ জন শিক্ষক পাঠদান করাচ্ছেন। তবে ১১ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। এর মধ্যে আরবি শিক্ষক নেই তিনজন। এ কারণেই এবার ২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন আরবি বিষয়েই ফেল করেছে।
মাদ্রাসা থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস না করায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদ্রাসার সুপারকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছেন। একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের শাস্তিস্বরূপ সরকারের উচিত এক বছর বেতন বন্ধ রাখা।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন রাজশাহীর পুঠিয়ার তারাপুর হাইস্কুল থেকে চারজন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন কুড়িগ্রাম সদরের পূর্ব কুমারপুর আদর্শ হাইস্কুল থেকে একজন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চারজন, নড়াইলের মুলদাইড় তালতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে তিনজন ও যশোরের শার্শা উপজেলার সাড়াতলা জুনিয়র হাইস্কুল থেকে আটজন পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে কেউ পাস করেনি।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি, সেগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এক বছর সময় দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। যদি না পারে, তখন প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাদ্রাসাই বেশি। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আন্ধারমানিক ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বি এম দাখিল মাদ্রাসাও আছে। দুই প্রতিষ্ঠান থেকে যথাক্রমে তিনজন ও সাতজন পরীক্ষা দিয়েছিল।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের মাদ্রাসাগুলোর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন: নুতন শেখ, গোপালগঞ্জ ও ইকবাল গফুর, সখীপুর, টাঙ্গাইল]
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply