1. tarekahmed884@gmail.com : adminsonali :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

শিক্ষকঘাটতি নিয়ে জোড়াতালির পাঠদান আর কত দিন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৩৬ Time View

দৈনিক মৌলভীবাজার সোনালী কণ্ঠ নিউজ ডট কম

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ছয় শ। বর্তমানে এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন মাত্র পাঁচজন। অর্থাৎ গড়ে ১৩০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন সরকারি শিক্ষক আছেন। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী গড়ে ৩০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক থাকার কথা ছিল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায় গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বললেন, শিক্ষকের অভাবে তাঁরা খুবই সমস্যায় আছেন। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে পড়ানো যাচ্ছে না। একই কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এসএসসির ফলাফলও খুব ভালো হচ্ছে না। শিক্ষকসংকট মেটাতে সাতজন ‘খণ্ডকালীন শিক্ষক’ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এককালীন কিছু টাকা নিয়ে স্থানীয় তরুণদের ‘খণ্ডকালীন শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কোনোমতে পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছেন। মাসে তাঁদের তিন-চার হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। তাঁরা সরকারি শিক্ষক চেয়েও পাচ্ছেন না।

বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে গড়ে ১৯৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষকের এই সংকট শুধু এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়। সারা দেশের সরকারি কলেজ ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় কমবেশি শিক্ষকসংকট রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কলেজগুলোয় পুরোনো কাঠামোর জনবল অনুযায়ীই ২০ শতাংশ পদ ফাঁকা। একইভাবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ শিক্ষকের পদ ফাঁকা। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এরই মধ্যে চলতি বছর থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত কম শিক্ষক দিয়ে এই শিক্ষাক্রম ঠিকমতো কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকঘাটতি দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আজ ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ঘটা করে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। দিবসটি এবার সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে। গত মাসের শুরুর দিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত হয়। দিবসটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দিবস উদ্‌যাপন-সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ তালিকাভুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের উপস্থিতিতে শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপন করা হবে। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সেমিনার আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’।

  • মাউশির তথ্য অনুযায়ী, পুরোনো ৩৫২ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ১ হাজার ৮১৭টি পদ শূন্য
  • ৬৫৪ সরকারি কলেজ শূন্য পদ আছে ৩ হাজার ২৩৭টি

মাধ্যমিকে শিক্ষকসংকট

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে সরকারি করা বিদ্যালয়গুলো মিলিয়ে বর্তমানে সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৬৯২টি। তবে নতুন করে সরকারি হওয়া সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এখনো সরকারি খাতে আসতে পারেননি। তাঁদের রাজস্ব খাতে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। পুরোনো ৩৫২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের মোট পদ ১১ হাজার ৬১০। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৭টি পদ শূন্য।

মাউশির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলছিলেন, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ আরও ১৩৫ সহকারী শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। এর অর্থ নতুন করে শূন্য পদের হিসাবে এগুলোও যোগ হবে।

মাউশির তথ্য বলছে, শূন্য পদগুলোর মধ্যে বেশি হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ে শূন্য পদ ২৭২টি ও ইংরেজিতে ২৩৫টি। বিজ্ঞানেও তুলনামূলকভাবে শিক্ষকের ঘাটতি বেশি। যেমন ভৌত বিজ্ঞানে শিক্ষকের ১৯৯টি ও জীববিজ্ঞানে ১৮৭টি পদ শূন্য। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে শূন্য পদ ২১৩টি। শুধু এই কয়টি বিষয় নয়, কমবেশি প্রায় সব বিষয়েই শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে।

আরও পড়ুন

পলিটেকনিক ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা কেমন আছেন?

শুধু সহকারী শিক্ষকের পদই নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদের শূন্য তালিকাও বেশ লম্বা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত ৪৬৫টি পদের মধ্যে ৪৬২টি পদই শূন্য। আর প্রধান শিক্ষকের ৪০টি পদ শূন্য।

আবার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম যাঁরা পরিবীক্ষণ (মনিটরিং) করেন, সেসব শিক্ষা কর্মকর্তার পদের অনেকগুলো শূন্য পড়ে আছে। এর মধ্যে সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ৬৪টি পদের সবই ফাঁকা। আর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ১৩টি পদ শূন্য। নয়টি উপপরিচালকের সব পদই চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক কম থাকায় সরকারি বিদ্যালয়গুলোয় সমস্যা হচ্ছে। এখন সহকারী শিক্ষক পদ পূরণের চেষ্টা চলছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নতুন করে সৃষ্টি করা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক পদ নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাবেন না।

সরেজমিন চিত্র

জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, মাধ্যমিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩০ হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তা নেই। বরং অনেক বিদ্যালয়ে একেকটি ক্লাসে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষকদের।

গতকাল বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন জীববিজ্ঞানের শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। ৫৭ ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৫১ জন। ইমা হাসান নামের এক শিক্ষার্থী মানুষের মস্তিষ্কের ওজন কতটুকু, তা জানতে চাইলে শিক্ষক সমাধান দিচ্ছিলেন।

তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে পড়াচ্ছেন সহকারী শিক্ষক অপু সরকার। এই ক্লাসে ৫৯ ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৫৪ জন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SonaliKantha
Theme Customized By BreakingNews