আবার অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। চার থেকে পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিনই একটু একটু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দামই বাজারে গত কয়েক দিনে বেড়েছে। নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। তবে এখনো যেসব বিক্রেতার কাছে পুরোনো দামে কেনা পেঁয়াজ আছে, তাঁরা দাম কিছুটা কম রাখছেন।
গত কয়েক দিনে নতুন করে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহঘাটতিকে দায়ী করছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে পেঁয়াজের সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে, যার প্রভাব পড়েছে দামে।
দেশি পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদনস্থল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী বাজারের পেঁয়াজের আড়তদার মো. রাজা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে কৃষকেরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। বৃষ্টিতেও কৃষকেরা ঘর থেকে পেঁয়াজ বের করতে চান না। তাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে দাম বেড়েছে সাড়ে ৫০০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি মণ দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২ হাজার ৭৫০ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা।
আজ শনিবার রাজধানীর মগবাজার ও মালিবাগ বাজার এবং আশপাশের দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ওই সময় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছেন মানভেদে ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায়। তাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৮৮ থেকে ৯২ টাকা। কারওয়ান বাজারের চেয়ে ঢাকার অন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি থাকে।
তবে মগবাজার ও মালিবাগ বাজারের যেসব বিক্রেতার কাছে পুরোনো দামে কেনা দেশি পেঁয়াজ আছে, তাঁরা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে তা বিক্রি করছেন। এদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের অনেকেই দেশি পেঁয়াজ না কিনে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এসব বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও গত চার থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মালিবাগ বাজারের গাজি স্টোরের বিক্রেতা মো. রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহসংকটে দেশি ও আমদানি করা উভয় পদের পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে। বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে বলে জানান তিনি।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তার একটি দেশি পেঁয়াজ। তবে দাম বেঁধে দেওয়ার পরও সরকার–নির্ধারিত ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় কোথাও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। উল্টো দাম বেঁধে দেওয়ার পর নতুন করে এখন আরেক দফা দাম বাড়ল।
দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকার চলতি বছরের ৫ জুন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আগস্টের শেষে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় সরকার তখন ভারতের বাইরে আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। ওই ৯ দেশ ছিল চীন, মিসর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর চলতি অর্থবছরে যত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, তার অধিকাংশই ভারত থেকে এসেছে। তবে ২০ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রতিবেশী দেশটি ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাতে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে যায়। তখন আমদানিকারকেরা বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ দেখায়। সরকারও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত ছাড়া আরও ৯ দেশ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়। এরপরও বাজারে নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
সাঁথিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, বছরের এই সময়ে অনেক কৃষক নিজেদের খেতে লাগানোর জন্য পেঁয়াজ রেখে দেন। কারণ, আর ১৫ দিনের মধ্যে আগাম পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ মূলত কৃষকের হাতে থাকা পেঁয়াজ থেকেই লাগানো হয়। আর মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে এখন পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply