বাংলাদেশি পাটপণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ আছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে। দেশটি এখন পাটপণ্যে নতুন করে কাউন্টারভেইলিং শুল্ক (সিভিডি) আরোপ করতে চায়। কিন্তু কোনো পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক থাকলে সিভিডি আরোপ করা যায় না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পাশাপাশি ভারতীয় আইনেও এটি বারণ করা আছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতের শুল্ক আরোপের নতুন উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত আসবে।
এ ব্যাপারে ভারতের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রেমিডিজের (ডিজিটিআর) সঙ্গে গত ৩০ অক্টোবর দিল্লিতে বৈঠক করে এসেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে বাংলাদেশের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান।
বৈঠকে বাংলাদেশ পাটপণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ বহাল থাকা অবস্থায় সিভিডি আরোপ না করার জন্য ভারতকে মৌখিক অনুরোধ জানায়। এরপর গত মঙ্গলবার লিখিতভাবেও ডিজিটিআরকে একই অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
যোগাযোগ করলে মো. হাফিজুর রহমান সম্প্রতি প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে ডব্লিউটিও এবং ভারতীয় আইন—কোনোটিতে এমন কোনো ধারা নেই যে একই পণ্যের ওপর একই সঙ্গে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক ও সিভিডি আরোপ করা যায়। পাটপণ্যে নগদ সহায়তা যেটুকু দেওয়া হয়, তাতে ভারতের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, এ কথাও আমরা তাদের জানিয়েছি।’
ভারত গত আগস্ট মাসে সিভিডি আরোপের তোড়জোড় শুরু করে। ডিজিটিআর ৪ আগস্ট দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা বাংলাদেশি পাটপণ্যে সিভিডি বসানোর বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করতে চায়। এ জন্য একটি পরামর্শক বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করে। ওই চিঠিতে এ-ও বলা হয়, ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ) এক আবেদনে বাংলাদেশে উৎপাদিত বা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পাটপণ্যের ওপর সিভিডি আরোপের অনুরোধ জানিয়েছে।
আইজেএমএ ডিজিটিআরকে বলেছে, বাংলাদেশ চালের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত পাটের বস্তা ও একই ধরনের ব্যাগ ভারতে রপ্তানি করে। এতে ভারতের পাটশিল্পে প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ পাটশিল্পে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে প্রচুর ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ প্রণোদনাও দিচ্ছে। এটি ভারতীয় পাটশিল্পে প্রভাব ফেলছে।
ডব্লিউটিও অ্যাগ্রিমেন্ট অব সাবসিডিজ অ্যান্ড কাউন্টারভেইলিং মেজারসের (এএসসিএম) ১৩ নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী ডিজিটিআর পরামর্শক বৈঠকটি করতে চায় বলে চিঠিতে জানায়। এ চিঠি পেয়ে একই দিন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কমার্শিয়াল মিনিস্টার এ কে এম আতিকুল হক বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে চিঠি দেন। সে চিঠিতে গত আগস্টের মধ্যেই ডিজিটিআরের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে সিদ্ধান্ত জানানোর অনুরোধ করা হয়।
এ নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি সেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ভারতে যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে বসেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমরা বলেছি, ভারত চায় শুধু আমাদের কাঁচা পাট। বাংলাদেশে তৈরি পাটপণ্য যাতে ভারতে রপ্তানি না হতে পারে, সে জন্যই তারা নতুন করে সিভিডি আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে আমাদের ওপর বড় আঘাত আসবে।’
ভারত ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ বছর মেয়াদে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানির ওপর টনপ্রতি ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। গত ১ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশটি নতুন করে আরও পাঁচ বছর সময় বাড়ায়। তবে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক ঢালাওভাবে নয়, নির্দিষ্ট রপ্তানিকারকদের ওপর আরোপ করা হয়। ভারতের এমন পদক্ষেপে দেশটিতে বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানি কমেছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত নতুন করে সিভিডি আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক শুধু নির্দিষ্ট রপ্তানিকারকদের ওপর হলেও ভারতের এবারের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের পুরো পাট খাতের ওপর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের এমন উদ্যোগ ঠিক হচ্ছে না। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)। সে হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ডব্লিউটিওর বিধিবিধান যে তুলনামূলক শিথিল আছে, বাংলাদেশকে তা ভারতের সামনে তুলে ধরা উচিত।
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন
Leave a Reply